ফের ফাটল আতঙ্ক যোশীমঠে। শহরের একটি মাঠে ৬ ফুট গভীর গর্ত নিয়ে আবারও চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলার এই শৈলশহরে। প্রবল বর্ষার ভারী বৃষ্টিতে নরম মাটি ধসে গিয়েই ওই গর্তের সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। নতুন করে গর্ত দেখতে পেয়ে স্থানীয় বাসিন্দারাই খবর দেন চামোলি জেলা প্রশাসনকে। তবে প্রশাসনের তরফে পিডবলুডি-এর একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর আগেই স্থানীয় বাসিন্দারা ওই গর্ত বুজিয়ে দেন। কিন্তু আতঙ্কের এখানেই শেষ নয়, বরং বর্ষার শুরুতেই এই নতুন করে মাটি ধসে গিয়ে গর্ত তৈরি হওয়াকে মোটেই ভালো লক্ষণ হিসেবে দেখছেন না স্থানীয়রা। বারবার ফিরে আসছে গত জানুয়ারি মাসের ভয়ানক স্মৃতি, যখন গোটা যোশীমঠ শহরে প্রায় ৮৫০টিরও বেশি বাড়িতে ফাটল দেখা গিয়েছিল।
রবিবার শহরের একটি আবাসিক ভবনের পাশের ছোট্ট মাঠে গর্তটি প্রথম লক্ষ্য করেন যোশীমঠের সুনীল ওয়ার্ডের বাসিন্দা বিনোদ সাকলানি। তারপর খবর পেয়ে স্থানীয় তহশীলদার রবি শাহের নেতৃত্বে পিডবলুডি-এর ইঞ্জিনিয়রদের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। কিন্তু ওই তহশীলদার জানিয়েছেন তারা ওই ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর আগেই স্থানীয় বাসিন্দারা মাটি দিয়ে ওই গর্ত বুজিয়ে দেন। তবে আপাতত এই সমস্যা মিটলেও যোশীমঠ এই মুহূর্তে গভীর সংকটে রয়েছে বলেই মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এই নিয়ে নিজের আশঙ্কা প্রকাশ করে ওই স্থানীয় বাসিন্দা বিনোদ সাকলানি জানিয়েছেন, “বর্ষার মরশুম এসে গিয়েছে। এই সময়ে আমাদের শহরের আরও ক্ষতি হবে।”
নতুন করে ফাটল দেখা যাওয়ায় শহরের বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিয়ে তৈরি হয়েছে আশঙ্কা। ইতিমধ্যেই প্রশাসনকে ১১ দফা দাবি জানিয়ে তহশীল দফতরের বাইরে ধরনা আন্দোলনে বসেছে ‘যোশীমঠ বাঁচাও সংঘর্ষ সমিতি’। চামোলি জেলার জেলাশাসক হিমাংশু খুরানার সঙ্গে দেখা করে তারা তাদের দাবিও জানিয়েছেন। সংগঠনের মুখপাত্র কমল রাতুরি জানিয়েছেন, “ইতিমধ্যেই সুনীল ওয়ার্ডে ফাটল দেখা গিয়েছে। এই বর্ষার মরশুমে ওই ফাটল আরও ছড়িয়ে পড়বে।”
সংগঠনের প্রধান অতুল সতী জানিয়েছেন, “আমরা এটাই বুঝতে পারছি না কেন উত্তরাখণ্ড সরকার যোশীমঠের এই সমস্যা নিয়ে করা বৈজ্ঞানিক সমীক্ষার রিপোর্ট সাধারণ মানুষের সামনে আনছে না! বর্ষা এসে গিয়েছে, সঙ্গে নতুন ফাটলও দেখা দিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা এই বর্ষায় আরও ভাঙনের আশঙ্কা করছেন। অথচ সরকারের যেন কোনও হুঁশই নেই।”
প্রসঙ্গত, গত জানুয়ারি মাসেই গোটা যোশীমঠ শহরের একেরপর এক বাড়িতে ফাটল ধরতে শুরু করে। কোনও কোনও বাড়ির বহু অংশ হুরমুড়িয়ে ভেঙেও পড়ে। সরকারি হিসেবে অনুযায়ী, মোট ৮৬৮টি বাড়ি ওই সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় যার মধ্যে ১৮১টি বাড়িকে ‘বসবাসের অযোগ্য’ বলে চিহ্নিত করে দেয় চামোলি জেলা প্রশাসন। প্রায় শতাধিক মানুষকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঘর-বাড়ি ছেড়ে ত্রাণ শিবিরে গিয়ে আশ্রয় নিতে হয়। এমনকি এখনও ৬টি পরিবার যারা সেই সময়ে আশ্রয় হারিয়েছেন, ত্রাণ শিবিরে রয়েছেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন