"বিশ্বের সবথেকে বড়, শ্রেষ্ঠ কূটনীতিবিদ হলেন ভগবান কৃষ্ণ এবং হনুমান।" কূটনীতি ব্যাখ্যা করার সময় এই মন্তব্য করলেন বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
পুনেতে নিজের লেখা ইংরেজি বই, "The India Way: Strategies for an Uncertain World", প্রকাশের অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেওয়ার সময় এস জয়শঙ্কর বলেন, “বিশ্বের সবচেয়ে বড় কূটনীতিক ছিলেন ভগবান কৃষ্ণ এবং হনুমান। যদি আমরা হনুমানের দিকে তাকাই, তিনি কূটনীতির বাইরে চলে গিয়েছিলেন, তিনি মিশনের ঊর্দ্ধে উঠে সীতার সাথে যোগাযোগ করেছিলেন এবং লঙ্কায় আগুনও লাগিয়েছিলেন।"
জয়শঙ্করের এই বইটি মারাঠি ভাষাতেও অনুবাদ করা হয়েছে। নাম দেওয়া হয়েছে “ভারত মার্গ”।
কৌশলগত ধৈর্যের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ভগবান কৃষ্ণের শিশুপালকে ক্ষমা করার উদাহরণ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। মহাকাব্য অনুযায়ী, কৃষ্ণ শিশুপালকে কথা দিয়েছিলেন তাঁর ১০০ টি ভুল ক্ষমা করবেন তিনি। কিন্তু ১০০টি ভুলের শেষে তিনি তাঁকে হত্যা করবেন।এটি একজন ভালো সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গুণ বলে মনে করেন এস জয়শঙ্কর।
কূটনীতিতে ‘কৌশলগত প্রতারণা’ একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক বলে মনে করেন বিদেশ মন্ত্রী। এর উদাহরণ দিতে গিয়েও মহাভারতের একটি ঘটনার বর্ণনা করেন তিনি। অর্জুনের ছেলে অভিমন্যুকে কৌরবরা হত্যা যোদ্ধা করলে, ছেলের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে পরের দিন সন্ধ্যার মধ্যে জয়দ্রথকে (যিনি প্রধান অপরাধী ছিলেন) হত্যা করার প্রতিজ্ঞা করেন অর্জুন। নইলে আগুনে ঝাঁপ দিয়ে নিজেকে শেষ করবেন তিনি। অর্জুনের এই প্রতিশ্রুতির সুযোগ নিয়ে জয়দ্রথকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লুকিয়ে রাখেন কৌরবরা, যাতে অর্জুন ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যা করেন।
সূর্য অস্ত যাওয়ার সাথে সাথে অর্জুন চ্যালেঞ্জ হেরেছেন মনে করে জয়দ্রথ বাইরে আসেন এবং অর্জুনের সামনে হাজির হন। তৎক্ষণাৎ কৃষ্ণ অর্জুনকে তীর নিক্ষেপ করে জয়দ্রথকে হত্যা করতে বলেন এবং অর্জুন তাই করেন। অর্থাৎ ‘কৌশলগত প্রতারণার’ পথ অবলম্বন করেছিলেন কৃষ্ণ।
পাকিস্তানের সাথে কৌরবদের তুলনা করে জয়শঙ্কর বলেন, “পাণ্ডবরা যেমন তাঁদের পছন্দমতো আত্মীয় বেছে নিতে পারেননি, তেমনি আমাদের কাছেও পছন্দমতো প্রতিবেশী দেশ বাছার সুযোগ নেই।তবে আমরা জানি, ভালো বুদ্ধির জয় হবেই।“
মহাভারতের অন্যতম দুই গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র কর্ণ এবং দুর্যোধনের সাথে পাকিস্তান এবং চীনের তুলনা করে তিনি বলেন, কর্ণ এবং দুর্যোধনের বন্ধুত্ব তাঁদের বা তাঁদের পরিবারের কারোরই উপকারে আসেনি।তদুপরি, এটি তাঁদের জীবন গ্রাস করেছিল। তাঁদের পরিবার এবং আত্মীয়দের জন্য চরম দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। দুই খারাপ ব্যক্তির বন্ধুত্ব শুধুমাত্র একে অপরের না, তাঁদের চারপাশের সমগ্র সমাজের ক্ষতি করে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন