পুলিশ একতরফা কাজ করছে - ABVPর লাঞ্ছনার শিকার দলিত অধ্যাপকের পাশে লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি

শিক্ষক সমিতি দাবি করেছে, ‘এক ছাত্রের অভিযোগের ভিত্তিতে দ্রুত FIR দায়ের করেছিল পুলিশ। কিন্তু, আক্রান্ত অধ্যাপকের অভিযোগ নিয়ে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’
অধ্যাপককে ঘেরাও এবিভিপির ছাত্রদের
অধ্যাপককে ঘেরাও এবিভিপির ছাত্রদের ফাইল ছবি সংগৃহীত
Published on

দলিত অধ্যাপক রবিকান্ত চন্দনের পাশে দাঁড়াল লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি (LUTA) । গত সপ্তাহে এক টেলিভিশন বিতর্কে জ্ঞানবাপী নিয়ে মন্তব্য করার জন্য দলিত অধ্যাপক রবিকান্তকে হেনস্থা এবং শারীরিক নিগ্রহ করার অভিযোগ ওঠে অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (ABVP)-এর সদস্যদের বিরুদ্ধে। এমনকি তাঁরা লখনউ বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ‘দেশ কে গদ্দারোঁ কো… গোলি মারো…’ শ্লোগানও তোলে। এনিয়ে অভিযোগ জানালেও পুলিশ কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। চুপ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি (LUTA)। রবিবার রাতে, এক বিবৃতিতে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

সূত্রের খবর, লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটি রবিবার একটি প্রস্তাব (Resolution) পাস করেছে। যেখানে তাঁরা দলিত অধ্যাপককে হেনস্থার ঘটনায় জড়িত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশের সমালোচনা করেছে। একইসঙ্গে একতরফা পদক্ষেপ নেওয়ার অভিযোগও তোলা হয়েছে।

লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি দাবি করেছে, ‘হিন্দু ছাত্রদের ভাবাবেগে আঘাত করেছেন অধ্যাপক রবিকান্ত, আমন দুবে নামে এক ছাত্রের এমন অভিযোগের ভিত্তিতে দ্রুত এফআইআর দায়ের করেছিল পুলিশ। কিন্তু, আক্রান্ত অধ্যাপকের অভিযোগ নিয়ে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আর, কী কারণে অভিযুক্ত ছাত্রদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, তার ব্যাখ্যা দিতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে।’

লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাজেন্দ্র ভার্মা জানিয়েছেন, ‘যারা অধ্যাপক রবিকান্তকে হেনস্থা করেছে এবং তাঁর বিরুদ্ধে বর্ণবাদী মন্তব্য করেছেন তাদের বিরুদ্ধে LUTA কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করছে। ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে, তা বিশ্ববিদ্যালয়কেও নিশ্চিত করতে হবে।’ একইসঙ্গে তিনি জানান, ‘আমাদের সংগঠন মনে করে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দেওয়া অধ্যাপক রবি কান্তের চিঠি নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষপ নেওয়া উচিত। তবে আমরা দুঃখিত, পুলিশ এখনও তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে কোনও এফআইআর দায়ের করেনি।’

অধ্যাপক রবিকান্ত চন্দন
অধ্যাপক রবিকান্ত চন্দন

কি ঘটেছিল ১০ মে, মঙ্গলবার?

জানা গেছে, ‘জ্ঞানব্যাপী সমীক্ষা: বিজেপিকে ২০২৪ সালের নির্বাচনে সুবিধা দেবে?’ শিরোনামে একটি বিতর্কসভার আয়োজন করে একটি হিন্দি সংবাদমাধ্যম। এতে অংশ নেন লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দি বিভাগের অধ্যাপক রবিকান্ত চন্দন। আলোচনা চলাকালীন তিনি এদিন পট্টভি সীতারামাইয়ার লেখা ‘ফেদার্স অ্যান্ড স্টোন’ থেকে একটি কাহিনী উল্লেখ করেন। ১৯৪৬ সালে জেলে বন্দী থাকাকালীন যে বইটি লিখেছিলেন পট্টভি সীতারামাইয়া। তারই একটি অংশ হল- ‘হিন্দু রাজা ও তাঁদের রাণীদের সঙ্গে নিয়ে বারাণসীর উপর দিয়ে যাচ্ছিলেন ঔরঙ্গজেব। এরইমাঝে হিন্দু রানীরা গঙ্গাস্নান করেন এবং কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরে যান। সন্ধ্যায় সবাই ফিরে এলেও, একজন ফেরেন নি। তখন ঔরঙ্গজেবের নির্দেশে খোঁজ শুরু হয়। তাঁর খোঁজ মেলে বিশ্বনাথ মন্দিরের গর্ভগৃহে। সেখানে মন্দিরের এক পুরোহিত তাঁকে ধর্ষণ করে। এই খবর ঔরঙ্গজেবের কাছে গেলে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে মন্দির ভাঙার নির্দেশ দেন।’

অধ্যাপক রবিকান্তের মুখে এই কাহিনী শুনেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন এবিভিপির কর্মী-সমর্থকেরা। এক হিন্দু নারীকে ধর্ষণের কারণে মন্দির ভেঙেছিলেন আওরঙ্গজেব! এমন কোনো ব্যাখ্যা মানতে রাজি হয়নি তাঁরা। অভিযোগ, এরপরই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের নিয়ে অধ্যাপকের উপর চড়াও হয় তারা। অধ্যাপককে হত্যার হুমকি দিয়ে 'গোলি মারো' স্লোগান তোলে এবিভিপি।

পরে হিন্দুত্ববাদীদের আক্রমণ থেকে বাঁচাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টরের রুমে আশ্রয় নেন অধ্যাপক রবিকান্ত। সেখান থেকেই ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে পুরো ঘটনার ভিডিও দেখানোর দাবি জানান তিনি। অধ্যাপক রবিকান্ত বলেন, তিনি আলোচনার পূর্বেই পট্টভির বইয়ের কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁর সেই কথা কেটে একটি নির্দিষ্ট অংশ সোস্যাল মিডিয়ায় ছড়াচ্ছে এবিভিপির ছেলেরা। দলিত বলে তাঁর কণ্ঠ রোধ করা হচ্ছে। তিনি হিন্দুধর্মের কোনো অপমান করেননি। তিনি আম্বেদকরের চিন্তা, আদর্শের অনুগামী।

-With IANS Inputs

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in