সাংবাদিক, নাট্যকর্মীদের জেলের মধ্যে অন্তর্বাস পরিয়ে হেনস্থা করার অভিযোগ উঠল পুলিশের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশের সিধি জেলার এক থানায়। এক বিজেপি বিধায়কের বিরুদ্ধে হওয়া একটি প্রতিবাদের খবর সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন এই সাংবাদিকরা। এই ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন গোটা দেশের সাংবাদিক সমাজ। নিন্দার ঝড় উঠেছে সব মহলেই।
বৃহস্পতিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় কয়েকটি ছবি ভাইরাল হয়। যেখানে দেখা যাচ্ছে জেলের মধ্যে আটজন পুরুষ কেবল নিম্নাঙ্গের অন্তর্বাস পরে রয়েছেন। এঁদের মধ্যে একজন অত্যন্ত পরিচিত মুখ, সাংবাদিক তথা ইউটিউবার কণিষ্ক টিওয়ার, লক্ষাধিক সাবস্ক্রাইবার রয়েছেন তাঁর চ্যানেলের।
কণিষ্ক জানিয়েছেন, ছবিটি তুলেছেন থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার অভিষেক সিংহ পরিহার। পুলিশই ছবিটি ভাইরাল করেছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছে মধ্যপ্রদেশ কংগ্রেস। গতকাল এক ট্যুইট বার্তায় ঘটনা প্রসঙ্গে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানকে নিশানা করে বলা হয়েছে “বাহ! শিবরাজজী বাহ, সম্ভব হলে আপনি সবাইকেই উলঙ্গ রাখবেন। নির্লজ্জ সরকার।"
জানা গেছে ঘটনাটি ২ এপ্রিল, শনিবারের। সিধি জেলার ইন্দ্রবতী নাট্য সমিতির পরিচালক নীরজ কুন্দ এক ভুয়ো ফেসবুক প্রোফাইল থেকে স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক কেদারনাথ শুক্ল এবং তার ছেলে গুরুদত্ত শুক্লের বিরুদ্ধে অশালীন মন্তব্য করেছিলেন। এই ঘটনার পর নীরজ কুন্দকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। নীরজের গ্রেপ্তারের পর বেশ কয়েকজন থানার সামনে বিক্ষোভ দেখান। বিক্ষোভের সেই খবর সংগ্রহ করতে যান কণিষ্ক তিওয়ারি। তাঁর ও অন্যান্যদের আপত্তিকর ছবি ভাইরাল হতেই সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি জানান, "বিক্ষোভের ভিডিও রেকর্ড করা শুরু করতেই পুলিশ আমাকে এসে জিজ্ঞাসা করেন 'আপনি বিধায়কের বিরুদ্ধে কেন খবর করছেন?' এরপর আমাকে ও আমার ক্যামেরা কর্মী সহ অন্যান্যদের গ্রেপ্তার করা হয়। আমাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধারায় অভিযোগ দায়ের করা হয়, যার মধ্যে অনধিকার প্রবেশ এবং জনশান্তি বিঘ্নিত করার অভিযোগ রয়েছে।"
তিওয়ারি জনিয়েছেন, বিধায়কের অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁদের আটক করা হয়। ১৮ ঘন্টার বেশি আটকে রাখা হয়েছিল তাঁদের।
তিনি আরও জানান, "অর্ধনগ্ন অবস্থায় আমাদের ছবি তুলে থানার প্রধান আধিকারিক অভিষেক সিংহ পারিহার হুমকি দিয়েছিলেন, প্রতিবেদনটি দেখানো হলে এই ছবি ভাইরাল করে দেওয়া হবে। বিবস্ত্র করে শহর ঘোরানো হবে। পুলিশই আমাদের ছবি ভাইরাল করেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এটা আমাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন।"
যদিও কণিষ্কের কথা অস্বীকার করেছেন সিধি পুলিশের জেলা সুপারিনটেনডেন্ট মুকেশ শ্রীবাস্তব। তিনি বলেছেন, "এরা কেউ সাংবাদিক নয়। থানায় ঢুকে ঝামেলা করার চেষ্টা করেছিল।" তাঁর কথায়, পোশাক খোলা সাধারণ ব্যাপার। ধৃতরা যাতে আত্মহত্যা বা ওই ধরনের অযাচিত কিছু না করে তা নিশ্চিত করতে এটা করা হয়।
তবে পুলিশ সুপারের এই ব্যাখ্যায় দেশজুড়ে ওঠা সমালোচনার ঝড় থামেনি। চাপের মুখে জেলার ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট পদমর্যাদার এক আধিকারিককে এই ঘটনার তদন্তের দিয়েছে মধ্যপ্রদেশ সরকার।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন