গত তিন মাসে চার-চারটি বিনিয়োগ প্রকল্প হাতছাড়া হয়েছে মহারাষ্ট্রের। আর, সবকটি চলে গিয়েছে গুজরাটে। প্রতিবেশী দুই রাজ্যের এই টানাপোড়নের মাঝে, বিনিয়োগ টানা নিয়ে সামনে এসেছে কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহন মন্ত্রী নীতিন গডকরির একটি চিঠি, যা নিয়ে সরগরম জাতীয় রাজনীতি।
সূত্রের খবর, গত ৭ অক্টোবর, টাটা সন্সের চেয়ারম্যান এন চন্দ্রশেখরনকে চিঠি লিখেছিলেন গডকরি। যে চিঠিতে গড়করি বলেছেন, ‘ইস্পাত, অটোমোবাইল কারখানা, পণ্য পরিষেবা, আইটি পরিষেবা এবং বিমান চলাচলের মতো ব্যবসায় ক্ষেত্রে বিনিয়োগের জন্য নাগপুরকে বেছে নিতে পারে টাটা গ্রুপ।’
বেদান্ত-ফক্সকন, বাল্ক ড্রাগ পার্ক, মেডিকেল ডিভাইস পার্স-এর পর গতকালই গুজরাটে চলে গিয়েছে টাটা এয়ার বাস প্রকল্প। এর ফলে প্রায় ১.৮০ লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগের সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে মহারাষ্ট্রের। যা নিয়ে বাণিজ্য মহলে জোর চর্চা শুরু হয়েছে।
জানা যাচ্ছে, টাটা এয়ার বাস প্রকল্প নিজের কেন্দ্র নাগপুরে নিয়ে আসার ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতিন গড়করি। এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যে প্রায় ৬ হাজার প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি হবে বলে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে টাটা এয়ার বাস প্রকল্প গুজরাটে ভাদোদরায় চালু হতে চলেছে। এই নিয়ে কিছুটা ক্ষুব্ধ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।
চিঠিতে ঠিক কী লিখেছিলেন গডকড়ি?
জানা যাচ্ছে, টাটা সন্সের চেয়ারম্যান এন চন্দ্রশেখরনকে লেখা চিঠিতে গড়করি জানান, ‘মিহান (MIHAN) বা ‘মাল্টি-মডাল ইন্টারন্যাশনাল হাব এয়ারপোর্ট অ্যাট নাগপুর’-এ ৩০০০ একর জমি আছে (SEZ and Non SEZ area)। এই এলাকার পাশে অনেক সংস্থা ভিত্তি স্থাপন করেছে।’
‘এই এলাকায় টাটা গ্রুপের কোম্পানি - টাটা স্টিল, টাটা মোটরস, টাটা কনজিউমার প্রোডাক্ট, ভোল্টাস, টাইটান ইন্ডাস্ট্রিজ, বিগ বাস্কেট-এর কারখানা গড়ে উঠলে - তা রাজ্যের ৩৫০ টি জেলার সঙ্গে রাতারাতি সংযোগ গড়ে উঠবে। এই এলাকায় জমির দামও কম হবে। তাছাড়া, লোকবল (Manpower) এবং গুদামজাতকরণের কোনও সমস্যা হবে না।’
অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিশেষজ্ঞদেরও মতে, নাগপুরের মিহান, যে জায়গাটি বিমান ব্যবসার কেন্দ্র হিসাবে গড়ে উঠছে, টাটা-এয়ারবাস প্রকল্পের জন্য তা গুজরাটের চেয়ে ভাল জায়গা হতে পারত।
কিন্তু, তারপরেও টাটাদের সেই প্রকল্প মহারাষ্ট্র ছেড়ে মোদী-অমিত শাহের রাজ্য গুজরাটে চলে গিয়েছে। যা নিয়ে অনেকটাই ব্যাকফুটে মোদী-অমিত শাহের ভিন্ন লবির নেতা নীতিন গডকরি।
শুধু তাই নয়, টাটা-এয়ারবাস প্রকল্প হাতছাড়া হওয়ার পরে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ সিন্ধে এবং উপমুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবীশকে বিঁধেছেন আদিত্য ঠাকরে। তিনি বলেন, ‘এই সরকারের প্রতি শিল্পপতিদের কোনও আস্থা নেই।’
প্রসঙ্গত, সামনেই গুজরাটে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে টাটাদের এই প্রকল্প মোদী-অমিত শাহ গোষ্ঠীকে বাড়তি অক্সিজেন যোগাবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন