“এই ঘটনার শেষ দেখে ছাড়বো। আমার বয়স ৪৯ বছর। আগামী ৩০ বছর আমি সংসদে লড়াই চালিয়ে যাব। আদিম হিংস্র মানবিকতার যদি আমি কেউ হই, স্বজন হারানো শ্মশানে তোদের চিতা আমি তুলবোই।” শুক্রবার সংসদ থেকে বহিষ্কৃত হবার পর লোকসভার সামনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে একথা বলেন প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র।
এদিন বহিষ্কৃত হবার পর তৃণমূল সাংসদ মৈত্র আরও বলেন, মোদী সরকার যদি ভেবে থাকে আমাকে বহিষ্কার করে আদানীর বিরুদ্ধে আমার মুখ বন্ধ করবে তাহলে ভুল করছে। তিনি আরও বলেন, এবার হয়তো আমার কাছে সিবিআই আসবে। আগামী ছয় মাস আমাকে সিবিআই দিয়ে হেনস্থা করা হবে।
এদিনই লোকসভা থেকে বহিষ্কৃত হন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। লোকসভায় বিতর্কের পর স্পীকার ওম বিড়লা তৃণমূল সাংসদকে লোকসভা থেকে বহিষ্কার করেন। লোকসভায় ধ্বনিভোটে পাশ হয় মহুয়া মৈত্রকে বহিষ্কারের প্রস্তাব। এর আগে ‘ক্যাশ অন কোয়ারি’ কান্ডে মহুয়া মৈত্রের সাংসদপদ খারিজের সুপারিশ করে এথিক্স কমিটি। এদিন এথিক্স কমিটির চেয়ারম্যান বিনোদ সোনকর লোকসভায় এই রিপোর্ট জমা দেন।
দীর্ঘ ৪৯৫ পাতার এই রিপোর্ট পড়ে দেখার জন্য তৃণমূলের পক্ষ থেকে সময় চাওয়া হয়। কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও এই রিপোর্ট পড়ে দেখার পর আলোচনার আবেদন জানানো হয়। যদিও স্পীকার সেই আবেদনে গুরুত্ব না দিয়ে এদিনই মহুয়া মৈত্রকে লোকসভা থেকে বহিষ্কার করেন।
সূত্র অনুসারে, "এথিক্স কমিটি মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে লোকসভার স্পিকারের কাছে তিনটি সুপারিশ করেছে এবং যা বিশদভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে।"
সূত্রটি আরও জানিয়েছে যে কমিটি অননুমোদিত ব্যক্তিদের কাছে লোকসভা পোর্টালের লগ ইন-এর তথ্য ভাগ করে নেওয়ার ক্ষেত্রে মহুয়া মৈত্রর 'অনৈতিক আচরণ' এবং ‘সংসদের অবমাননা'র কথা উল্লেখ করেছে এবং 'জাতীয় নিরাপত্তা'-তে এর প্রভাব প্রসঙ্গে জানিয়েছে।
সূত্রটি আরও জানিয়েছে, "কমিটি তার প্রতিবেদনে সুপারিশ করেছে যে মৈত্রর পক্ষ থেকে গুরুতর অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তির আহ্বান জানানো হয়েছে। কমিটি তাই সুপারিশ করেছে যে মহুয়া মৈত্রকে লোকসভার সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার করা যেতে পারে।"
মহুয়া মৈত্র পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত সাংসদ। তাঁর বিরুদ্ধে ‘ক্যাশ ফর কোয়ারি’র অভিযোগ আনেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। এরপরেই এথিক্স কমিটির কাছে এই বিষয়টি পাঠানো হয়।
৯ নভেম্বর, সংসদের এথিক্স কমিটি এই অভিযোগ মহুয়া মৈত্রর বিরুদ্ধে খসড়া প্রতিবেদন গ্রহণ করে এবং প্যানেলের সুপারিশ সহ লোকসভা স্পিকারের কাছে জমা দেয়।
মহুয়া মৈত্রের বহিষ্কারের ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, মহুয়াকে বলতেই দেওয়া হয়নি। আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনও সুযোগ না দিয়েই ওকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, দল মহুয়ার পাশে ছিল, আছে এবং থাকবে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন