মোদী সরকারের ন’ বছরের রাজত্বকালকে কটাক্ষ করেছে কংগ্রেস। সোমবার, এক টুইট বার্তায় কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে লিখেছেন, ‘৯ বছরে চরম মুদ্রাস্ফীতির মাঝে জনগণের টাকা লুট করেছে বিজেপি! গুরুত্বপূর্ণ সবকিছুকে প্রভাবিত করেছে জিএসটি। বাজেটকে শেষ করে দিয়ে মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলা হয়েছে।’
হিন্দি ভাষায় খাড়গে আরও লিখেছেন, ‘'মুদ্রাস্ফীতি দেখা যাচ্ছে না' বা ' আমরা এই দামি জিনিস খাই না' - এ ধরণের সবকিছুই অহংকার দাবি। 'আচ্ছে দিন' থেকে 'অমৃত কাল' যাত্রা, মুদ্রাস্ফীতির কারণে জনগণের লুটপাটের পরিমাণ বেড়েছে!’
২০১৪ সালের ২৬ মে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে প্রথম শপথ নিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। এরপর, ২০১৯ সালের ৩০ মে, প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দ্বিতীয়বার শপথ নেন তিনি। সেই হিসাবে, গত ২৬ মে, ন’বছর পূর্ণ করেছে কেন্দ্রের মোদী সরকার। আর, এই ন’বছরকে দেশের অগ্রগতির ঐতিহাসিক পর্ব বলে দাবি করেছে বিজেপি।
গত সপ্তাহে এক সাক্ষাৎকারে বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা বলেন, ‘একটা পঙ্গু দেশকে সচল করেছেন মোদী। পরিকাঠামো উন্নয়ন, সড়ক সম্প্রসারণ, অর্থনৈতিক বৃদ্ধি—সব দিক থেকেই এই ন’বছর দেশের জন্য ঐতিহাসিক।’
বিজেপি’র এই দাবির পাল্টা দিয়েছে কংগ্রেস। দেশের মানুষের সঙ্গে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘ক্ষমা’ চাওয়া উচিত বলে দাবি করেছে কংগ্রেস। একই সঙ্গে মোদীর ৯ বছরের রাজত্বকাল নিয়ে ৯টি গুরুতর প্রশ্নও তুলেছে খাড়গের দল।
কী কী প্রশ্ন করা হয়েছে মোদীর উদ্দেশ্যে?
১. অর্থনীতি: ভারতে বেকারত্ব এবং মুদ্রাস্ফীতি কেন দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে? কেন ধনীরা আরও ধনী হচ্ছেন আর গরিব কেন আরও গরিব হয়ে পড়ছেন? দেশের সম্পদ কেন প্রধানমন্ত্রী মোদীর বন্ধুর কাছে জলের দরে বেচে দেওয়া হচ্ছে? দেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য বেড়ে যাচ্ছে কেন?
২. কৃষি ও কৃষক: ৩ টি কালা কৃষি আইন বাতিলের সময় কৃষকদের সঙ্গে হওয়া চুক্তিকে সম্মান জানানো হলো না কেন? কেন MSP-র আইনি বৈধতা দেওয়া হলো না? গত ৯ বছরে কৃষকের আয় দ্বিগুণ হলো না কেন?
৩. দুর্নীতি এবং নীরবতা: মানুষের কষ্টার্জিত অর্থের সঞ্চয়ে গড়ে ওঠা জীবন বিমা এবং স্টেট ব্যাঙ্কের অর্থ কেন বন্ধু আদানির সংস্থায় লগ্নি করা হচ্ছে? চোরেদের দেশ থেকে পালানোর সুযোগ করে দেওয়া হলো কেন? বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে ব্যাপক দুর্নীতি হলেও আপনি নীরব কেন? কেন আপনি ভারতীয়দের কষ্ট পেতে দিচ্ছেন?
৪. চীন ও জাতীয় নিরাপত্তা: ২০২০ সালে চীনকে আপনার ক্লিন চিট দেওয়ার পরেও কেন তারা ভারতীয় ভূখণ্ড দখল করে চলেছে? চীনের সাথে ১৮ বার বৈঠক হয়েছে, তবুও কেন তারা ভারতীয় ভূখণ্ড দিতে অস্বীকার করে, এর পরিবর্তে তাঁরা আক্রমণাত্মক কৌশল চালিয়ে যাচ্ছে?
৫. সম্প্রীতি: কেন আপনি ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাচনী লাভের জন্য ঘৃণার রাজনীতি এবং সমাজে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করছেন?
৬. সামাজিক ন্যায়বিচার: মহিলা, দলিত, সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে একের পর এক আক্রমণ নেমে এলেও মোদী কেন এই বিষয়ে নীরব কেন? কেন আপনি জাতিগত জনগণনা এড়িয়ে যাচ্ছেন?
৭. গণতন্ত্র ও ফেডারেলিজম: গত ন' বছরে কেন আপনি আমাদের সাংবিধানিক মূল্যবোধ ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে দুর্বল করেছেন? কেন বিরোধী নেতা ও বিরোধী দলের সরকারকে টার্গেট করা হচ্ছে? কেন আপনি জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকারকে অস্থিতিশীল করতে নির্লজ্জভাবে ‘টাকার ক্ষমতা’ ব্যবহার করছেন?
৮. কল্যাণমূলক প্রকল্প: কেন MNREGA এর মতো একটি প্রকল্প দুর্বল করা হচ্ছে? কেন দরিদ্র, অভাবী এবং আদিবাসীদের কল্যাণে তৈরি প্রকল্পগুলিতে বাজেট কমিয়ে সেগুলিকে দুর্বল করা হচ্ছে?
৯. কোভিড-১৯ মোকাবিলায় অব্যবস্থা: করোনায় অব্যবস্থার কারণে প্রাণ হারানো ৪০ লাখ মানুষের পরিবার কেন ন্যায়বিচার পায়নি? কেন তাঁদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে অস্বীকার করেছে মোদী সরকার? হঠাৎ করে লকডাউন করে কেন আপনি লক্ষ লক্ষ শ্রমিককে বাড়ি ফিরতে বাধ্য করেছিলেন, কোনো রকম সহায়তা প্রদান ছাড়াই?
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন