মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিচ্ছেন এন বীরেন সিং? আপাতত এই বিষয়েই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক গুঞ্জন। সূত্র অনুসারে, মণিপুরের বিজেপি বিধায়কদের একটা বড়ো অংশই চাইছেন পদ থেকে ইস্তফা দিন এন বীরেন সিং। যদিও ইস্তফা দেবার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং। সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে থেকে যাওয়া অথবা ইস্তফা দেওয়া কোনোটাই আমার হাতে নেই।
গত বছর মণিপুরের জাতি দাঙ্গার সময় থেকেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নিস্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছিল রাজনৈতিক মহল। এমনকি বিজেপিরও কিছু বিধায়কের পক্ষ থেকেও এই অভিযোগ তোলা হয়েছিল।
সূত্র অনুসারে বিজেপির কিছু বিধায়ক ছাড়াও এনডিএ জোটসঙ্গী ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (NPP) এবং নাগা পিপলস ফ্রন্ট (NPF)-এর বিধায়করাও এন বীরেন সিং-এর পদত্যাগ চেয়ে সরব হয়েছেন। সরব হয়েছে জেডি(ইউ)-ও।
যদিও এই দাবি সম্পূর্ণ অস্বীকার করে এনডিএ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার তাঁর সঙ্গে ৩৫ জন দলীয় বিধায়ক দেখা করে তাঁর প্রতি আস্থা জানিয়েছেন। ওই বৈঠক থেকে মণিপুরের বিষয়ে আলোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার জন্য সময় চাওয়া হয়েছে।
এনডিটিভি এন বীরেন সিং-কে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, “বিধায়করা আমাকে প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সময় নেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছেন। কিন্তু যেহেতু সংসদ চলছে এবং সকলেই ব্যস্ততার মধ্যে আছেন তাই আমি ভেবেছি এখন কেন বিরক্ত করব? মিটিং হলে আমিও যাব। কিন্তু কেউ কেউ আগে চলে গেছেন। পদত্যাগের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।”
যদিও দিন কয়েক আগেই মণিপুর রাজ্য বিজেপি সভাপতি এ সারদা দেবী দিল্লীতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-র সঙ্গে দীর্ঘসময় ধরে মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন।
সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে মণিপুরের দুটি আসনেই পরাজিত হয়েছে বিজেপি। এই রাজ্যের দুই আসনে বিজেপি এবং তাদের জোটসঙ্গী নাগা পিপলস ফ্রন্টের প্রার্থীদের পরাস্ত করেছে কংগ্রেস। উল্লেখযোগ্যভাবে এই নির্বাচনে রাজ্যে ক্ষমতাসীন বিজেপি-র ভোট কমেছে ১৭.৭৫ শতাংশ এবং জোটসঙ্গী এনপিএফ-এর ভোট কমেছে ৩.৬৮ শতাংশ। অন্যদিকে দুই আসনেই জয়ী কংগ্রেসের ভোট বেড়েছে প্রায় ২২.৮৮ শতাংশ। মণিপুরে ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে এনডিএ শিবিরের প্রাপ্ত ভোট ছিল ৩৫.৪৫ শতাংশ। এবার যা কমে দাঁড়িয়েছে ২১.৪৩ শতাংশ।
গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে মণিপুর পুলিশের তরফে আইজি (অপারেশন) আই.কে মুইভা জানিয়েছিলেন, “গত ৪ মাসে মণিপুরের জাতিগত হিংসার কারণে অন্ততপক্ষে ১৭৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন, আহত হয়েছেন ১১০৮ জন এবং ৩২ জন এখনও পর্যন্ত নিখোঁজ। নিহতদের মধ্যে ৯৬ জনের দেহ শনাক্ত করাই যায়নি।"
গত বছরের ৩ মে মণিপুরের শুরু হওয়া জাতিগত হিংসায় বিপর্যস্ত রাজ্যে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা নিয়ে রাজ্যের সাধারণ মানুষকে আশ্বস্ত করে আই জি মুইভা জানান, “গত চার মাসে রাজ্যে ৪৭৮৯টি বাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, মোট ৩৮৬টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে ২৫৪টি গির্জা এবং ১৩২টি মন্দির।”
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন