গতকালই মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা এন বীরেন সিং জানিয়েছিলেন ১৯৬১ সালের পর যারা রাজ্যে এসে বসবাস করছে তাঁদের চিহ্নিত ও নির্বাসিত করা হবে। যদিও বিশেষজ্ঞরা মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদেশি চিহ্নিতকরণ উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হলেও তাঁদের সঙ্গে সঙ্গেই নির্বাসিত করা সম্ভব নয়। কারণ যতক্ষণ না অন্যান্য দেশ তাঁদের সেই দেশের নাগরিক হিসেবে মেনে নেবে ততক্ষণ তাঁদের নির্বাসিত করা যায় না।
গত বছরের মে মাস থেকে রক্তক্ষয়ী জাতিদাঙ্গার সাক্ষী মণিপুর। যে ঘটনায় প্রায় ২০০-র বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বহু মানুষ আহত হয়েছেন। ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে বহু মানুষের বাড়ি। এই ঘটনা প্রসঙ্গে মণিপুর সরকারের বক্তব্য – প্রতিবেশি দেশ মায়ানমার থেকে আগত অভিবাসীরাই এই হিংসার পেছনে দায়ী।
গতকাল ‘প্রোজেক্ট বুনিয়াদ’ প্রকল্পের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং বলেন, যারা এই রাজ্যে ১৯৬১ সালের পর এসেছেন এবং বসবাস করতে শুরু করেছেন তাঁদের জাতি ও গোষ্ঠী নির্বিশেষে চিহ্নিত করা হবে এবং নির্বাসিত করা হবে।
এর আগে ২০২২ সালের জুন মাসে মণিপুর বিধানসভা এই মর্মে এক প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল। যেখানে মণিপুরে প্রবেশের ভিত্তি বছর হিসেবে ১৯৬১কে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
এই প্রসঙ্গে নাগা শান্তি আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক আশাং কাসার জানিয়েছেন, অভিবাসীদের চিহ্নিত করা খুবই কঠিন কাজ। ফলত মণিপুর ইচ্ছে করলেই তাঁদের নির্বাসিত করতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, মণিপুরে বহু মানুষ কয়েক দশক ধরে বসবাস করছেন। তাঁরা বর্তমানে নাগরিকত্বের স্তরে পৌঁছে গেছেন। চিহ্নিতকরণ ও নির্বাসনের সময় এই প্রসঙ্গিত আইনগত বিষয়গুলি খতিয়ে দেখা উচিত।
ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের পক্ষ থেকে ভারত মায়ানমারের মধ্যে যাতায়াতে নিয়ন্ত্রণ আনা হয়েছে। মণিপুর সরকার জানিয়েছে, গত বছর ২,১৮৭ জন বহিরাগত মণিপুরের বিভিন্ন ক্যাম্পে ছিল। যারা ২০২১-এর ফেব্রুয়ারি মাসে মায়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর মণিপুরে প্রবেশ করেছিল।
মণিপুরের মোট জনসংখ্যার ৫৩ শতাংশ মেইতেই। যারা মূলত উপত্যকা অঞ্চলে বসবাস করেন। অন্যদিকে মণিপুরের পার্বত্য অঞ্চলে বসবাস করেন আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত নাগা ও কুকিরা। যারা মণিপুরের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ। মেইতেইদের তফশিলি উপজাতিভুক্ত করার আন্দোলনের প্রতিবাদে গত বছর দুই গোষ্ঠীর মধ্যে হিংসা ছড়ায়।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন