মণিপুরের পরিস্থিতি ক্রমশই আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিরাপত্তা বাহিনী নামার পর সংঘর্ষে কমপক্ষে আট জন আহত হয়েছে। তেইশ জন মেইতেই বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। এঁদের ইম্ফল পূর্ব, ইম্ফল পশ্চিম এবং বিষ্ণুপুর জেলা থেকে আটক করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বন্ধ রাখা হয়েছে ইন্টারনেট। জারি করা হয়েছে কারফিউ।
রবিবার সকালে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ইম্ফলে উত্তেজিত জনতা বিধায়ক এবং জনপ্রতিনিধিদের বাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। সূত্র অনুসারে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং-এর পৈত্রিক বাসভবন ঘিরে রেখে হামলা চালায় উত্তেজিত জনতা।
পুলিশের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার গ্যাসের শেল ছুঁড়েছে। ইম্ফলের সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দিতে বাহিনীর পাশাপাশি সেনা এবং আসাম রাইফেলসের জওয়ান মোতায়েন করা হয়েছে। সমস্ত জায়গায় বাহিনী ফ্ল্যাগ মার্চ করছে।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে একটি .৩২ পিস্তল, সাত রাউন্ড গুলি, আটটি মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
বিক্ষোভকারীদের মতে এন বীরেন সিং-এর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। তাদের অভিযোগ, কুকি জঙ্গীরা যে ছয়জন মেইতেই মহিলা ও শিশুকে অপহরণ করেছিল তাঁদেরও উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। গত ১১ নভেম্বর জিরিবাম থেকে তাঁরা নিখোঁজ হয়েছিলেন। শুক্রবার এবং শনিবার তাদের দেহ উদ্ধার করা হয়। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে মৃতদের পরিচয় জানানো হয়নি।
সংবাদসংস্থার তথ্য অনুসারে, বাকি ইম্ফলের মোটের ওপর শান্ত থাকলেও ইম্ফল উপত্যকার পরিস্থিতি এই মুহূর্তে উদ্বেগজনক। এই অঞ্চলেই অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়েছে এবং বন্ধ রাখা হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। জিরিবামে ছয় মহিলা এবং শিশুর দেহ উদ্ধারের পরেই এই অঞ্চল উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
শুক্রবার রাতে এবং শনিবার সকালে জিরিবামের বরাক নদী থেকে এই ছয় দেহ উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনার পরেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। মেইতেইদের অভিযোগ, কুকি জঙ্গীরা তাদের হত্যা করেছে। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। এই ঘটনার পরেই কমপক্ষে ছয় বিধায়কের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখায় উত্তেজিত জনতা। রাজ্যের তিন মন্ত্রীর বাসভবনেও আক্রমণ চালায় এবং আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। এঁদের মধ্যে আছে রাজ্যের মন্ত্রী সাপাম রঞ্জন, এল সুশীন্দ্র সিং এবং ওয়াই খেমচাঁদ। এছাড়াও মুখ্যমন্ত্রীর জামাই, বিজেপি বিধায়ক আর কে ইমোর বাড়িতেও ভাঙচুর চালানো হয়। জেডিইউ বিধায়ক টি অরুণ এবং বিজেপি বিধায়ক করম শ্যামের বাড়িতেও ভাঙচুর চালিয়েছে বিক্ষোভকারীরা।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাজ্যের সাত জেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ইন্টারনেট এবং মোবাইল ডেটা পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়াও ইম্ফল পশ্চিম, ইম্ফল পূর্ব, বিষ্ণুপুর, থৌবাল, কাকচিং, কাংপোকপি এবং চুরাচন্দ্রপুরের কিছু অঞ্চলে দু’দিনের জন্য ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে।
দ্য কোঅরডিনেশন কমিটি অন মণিপুর ইন্টিগ্রিটি (COCOMI)-এর মুখপাত্র কে অথৌবা অবিলম্বে এই অঞ্চল থেকে AFSPA (আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ারস অ্যাক্ট) প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। সম্প্রতি এই অঞ্চলের ছ’টি পুলিশ থানা এলাকায় আফস্পা জারি করা হয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন