রাজ্য সরকারে মারাঠাদের জন্য বিশেষ সংরক্ষণ চাই, এই দাবিতে মহারাষ্ট্রে জেগে ওঠা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মুখ হয়ে উঠেছেন মারাঠা ক্রান্তি মোর্চার নেতা মনোজ জারাঙ্গে-পাতিল। তফশিলি জাতি/উপজাতির মতো মারাঠাদের জন্য রাজ্য সরকারে বিশেষ সংরক্ষণ চেয়ে গত ২৯ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য অনশনে বসেছেন পাতিল।
মঙ্গলবার মহারাষ্ট্র সরকারের কাছে সংরক্ষণ নিয়ে একটি সরকারি প্রস্তাব জারি করার দাবি জানিয়ে নিজের অবস্থান আবারও স্পষ্ট করলেন তিনি। তবে সরকারের তরফে এর জন্য কিছুটা সময় চেয়ে নেওয়া হয়েছে।
মহারাষ্ট্রের জালনা জেলার অন্তরওয়ালি সারাথে গ্রামে গত ২৯ আগস্ট থেকে অনশনে বসেছেন মনোজ। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্নভাবে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে অনশন পরিত্যাগ করার অনুরোধ করা হলেও নিজের অবস্থানে অনড় মারাঠা ক্রান্তি মোর্চার নেতা।
প্রায় একসপ্তাহ ধরে অনশনের ফলে ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে আসা শরীর নিয়ে শুয়ে শুয়েই সোমবার রাতে তিনি জানিয়েছিলেন, “যদি মঙ্গলবারেও সরকার তাঁদের সিদ্ধান্ত না জানায় তাহলে জল খাওয়াও বন্ধ করে দেবো।” তাঁর এই হুঁশিয়ারি নতুন করে উদ্বেগ ছড়িয়েছে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে।
মঙ্গলবার সকালেই সরকার পক্ষের শিবসেনা নেতা অর্জুন খোটকারের নেতৃত্বে একটি দল মনোজের সঙ্গে দেখা করেন। তারা মনোজকে তাঁর অনশন ভেঙে বেরিয়ে এসে সরকারকে একমাস সময় দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। সংরক্ষণের বিষয়টি সুপরিকল্পিতভাবে সম্পন্ন করতে চায় সসরকার, যাতে পরবর্তী সরকারের সময়ও এই ব্যবস্থা অটুট থাকে।
তবে সেই অনুরোধ ফিরিয়ে দিয়ে মনোজ নিজের অবস্থানে অনড় থেকে অনশন অব্যাহত রেখেছেন। সূত্রের খবর, মঙ্গলবার বিকেলে একনাথ শিন্ডের তরফে পাঠানো আরও একটি প্রতিনিধি দল মনোজের সঙ্গে দেখা করতে যাবে। তবে এদিন সকালে মনোজ সাফ জানিয়েছেন, “আমরা একটি সিদ্ধান্ত ও একটি সরকারি প্রস্তাব চাইছি। গোটা রাজ্য আশা করে বসে, আজ সরকার একটি সিদ্ধান্ত নেবে এবং সংরক্ষণ নিয়ে একটি সরকারি প্রস্তাব (GR) প্রকাশ করবে।”
এদিকে, বঞ্চিত বহুজন আঘাদি (ভিবিএ) সভাপতি প্রকাশ আম্বেদকর সম্ভবত আন্তরভালি-সারাটি গ্রামে জারঞ্জে-পাতিল অঞ্চলে যাবেন। গত ১ সেপ্টেম্বর এই অঞ্চলেই বিক্ষুব্ধ জনতার উপর লাঠি এবং টিয়ার-গ্যাস সহ ব্যাপক পুলিশি আক্রমণের ঘটনা ঘটে।
এই ঘটনার পর মারাঠা সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে তীব্র রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া এবং নিন্দার পর উপমুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ সোমবার পুলিশি আক্রমণে আহত স্থানীয় হাসপাতালে চিকিত্সাধীনদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।
২০২১ সালে সুপ্রিম কোর্ট মারাঠা সংরক্ষণ কোটা বাতিল করার পরে, জারাঙ্গে-পাতিল জালনা জেলার সাষ্ট-পিম্পলগাঁওয়ে তিন মাসের আন্দোলন সহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন। এখানে বহু মানুষ তাঁর সাথে যোগ দেন।
তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে এই আন্দোলন প্রসঙ্গে জানতে পেরে মুম্বাইতে এক বৈঠকের জন্য জারেঙ্গ-পাতিলকে আমন্ত্রণ জানান। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পর পাতিল তাঁর প্রতিবাদ প্রত্যাহার করে নেন।
এর আগে, তিনি মারাঠা কর্মীদের পরিবারের জন্য তহবিল সংগ্রহের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ২০১৬-১৭ সালে সংরক্ষণের জন্য আন্দোলনের সময় যারা বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে মারা গেছিলেন তাদের জন্যই ছিল ওই অর্থ সংগ্রহ।
আন্দোলন প্রসঙ্গে পাতিল জানিয়েছেন, "আমরা একটি সরকারি বিজ্ঞপ্তি চাই যেখানে বলা হবে মারাঠারা যারা কুনবি (একটি উপজাতি) হিসাবে বিবেচিত হয়, তাঁরা ওবিসি হিসাবে সংরক্ষণের সুবিধা পাবে।" তিনি সাংবাদিকদের আরও বলেন, যদি এই অধ্যাদেশ জারি করা না হয়, তিনি মঙ্গলবার থেকে জল খাওয়াও বন্ধ করে দেবেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন