'কেন্দ্রের কৃষক-শ্রমিক বিরোধী নীতি'র বিরুদ্ধে, দিল্লির রামলীলা ময়দানে বিশাল জমায়েত করে বিক্ষোভ দেখালেন হাজার হাজার কৃষক-শ্রমিক।
যৌথভাবে এই বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছিল সেন্টার অফ ইন্ডিয়ান ট্রেড ইউনিয়ন (সিআইটিইউ), সারা ভারত কৃষক সভা (এআইকেএস) এবং সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়ন (এআইএডব্লিউইউ)। আর, সেই ডাকে সাড়া দিয়ে কৃষক-শ্রমিকদের বিক্ষোভে যোগ দেন বিভিন্ন রাজ্যের আশাকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি এবং MGNREGA কর্মীরাও।
এদিনে, মোদী সরকারের বছরে ২ কোটি চাকরী দেওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সারা ভারত কৃষক সভার প্রতিনিধিরা। তাঁরা বলেন, 'বছরে ২ কোটি চাকরী দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল মোদী সরকার। আমরা জানতে চাই, সেই চাকরিগুলি কোথায় গেছে? কতজনকে সেই চাকরি দেওয়া হয়েছে? আজকের দিনে দেশে বেকারত্ব একটি মহামারী হিসাবে দেখা দিয়েছে।'
কেন্দ্রীয় সরকার গ্রামীণ কর্মসংস্থান গ্যারান্টি প্রকল্পের পাশাপাশি অন্যান্য কল্যাণমূলক কর্মসূচীতে পর্যায়ক্রমে বাজেট বরাদ্দ কমিয়ে "শ্বাসরোধ" করার চেষ্টা করছে বলেও, এদিন অভিযোগ করেন বিক্ষোভকারীরা। পাশাপাশি মুদ্রাস্ফীতি রোধ, ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের (এমএসপি) আইনি গ্যারান্টি, সমস্ত শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি প্রতি মাসে ২৬ হাজার টাকা এবং ১০ হাজার টাকা করে পেনশন দাবি করছেন তাঁরা।
এদিকে, দেশের কৃষক-শ্রমিকদের এই দাবিকে সমর্থন জানিয়েছে সিপিআই(এম)ও। মোদী সরকারকে উদ্দেশ্য করে এক টুইট বার্তায় সিপিআই(এম) জানিয়েছে, 'প্রতি মাসে ২৬ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি এবং সমস্ত কর্মীদের জন্য ১০ হাজার টাকা পেনশন নিশ্চিত করুন। ঠিকাশ্রমিক নিয়োগ করবেন না। আর, অগ্নিপথ প্রকল্প ফিরিয়ে নিন।'
অন্যদিকে, সরব হয়েছে সেন্টার অফ ইন্ডিয়ান ট্রেড ইউনিয়ন (সিআইটিইউ)। টুইটারে সিআইটিইউ বলেছে, 'আদিবাসীদের বন ও জমির অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে এবং কর্পোরেটদের দেওয়া হচ্ছে। কৃষকরা মজুরি পাচ্ছেন না। যখন MGNREGA-এর অধীনে ১০০ দিনের কাজের চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে, তখন এই খাতে ব্যাপকহারে অর্থ বরাদ্দ কমাচ্ছে কেন্দ্র। গত দুই বছরে এই খাতে ৩৮ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ কমানো হয়েছে।'
এই সমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য সকলকে আহ্বান জানিয়েছিলেন অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহ, ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিব, সমাজকর্মী হর্ষ মান্দারের মতো দুই’ শতাধিক ব্যক্তি। এক বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, ‘বর্তমান সরকারের কুখ্যাত অর্থনৈতিক আক্রমণের জেরে শ্রমজীবী মানুষের অবস্থা নজিরবিহীন অবনতি হয়েছে। মজুরি হ্রাস, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, কৃষিজাত পণ্যের আয় কমে যাওয়া, কৃষির অস্বাভাবিক মজুরির ফলে গভীর সংকটে লক্ষ লক্ষ মানুষ। আর, সরকারকের বর্তমান পরিকল্পনা ও নীতি প্রান্তিক পরিবারগুলিতে আরও প্রান্তিকতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।'
জানা যাচ্ছে, লাল ঝান্ডা হাতে দিল্লির রাজপথ ছিল বিক্ষোভকারীদের দখলে। রামলীলা ময়দানে এদিনের বিক্ষোভ সামাল দিলে বেজায় চাপে পড়তে হয়েছে দিল্লি পুলিশকে। বেশ কয়েকটি রুটের গাড়ি ভিন্নপথে চালানোর ব্যবস্থা করতে হয়েছে দিল্লি ট্র্যাফিক পুলিশকে। এদিন, নিরাপত্তার জন্য রামলীলা ময়দানের মোতায়েন করা হয়েছিল বিশাল সংখ্যক আধা সেনা বাহিনী ও দিল্লি পুলিশ।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন