স্বাধীনতার ৭৬ বছর পরও এক হিন্দু মেয়ের সঙ্গে প্রকাশ্যে ঘোরার জন্য এক মুসলিম ছেলেকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠলো উন্মত্ত জনতার বিরুদ্ধে। তাও আবার এই ঘটনা ঘটল একদম খোদ ভারতের বাণিজ্যনগরী মুম্বইয়ে। মঙ্গলবার সেই ঘটনার একটি ভিডিও সমাজমাধ্যমে বেশ ভাইরাল হয়েছে। তবে ওই ভিডিও থেকে ঘটনাটি কত পুরনো বা ছেলেটি-মেয়েটির পরিচয় সম্পর্কেও তেমন কিছু জানা যায়নি। তবে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে সঠিক বিচারের দাবি জানিয়েছে সমাজবাদী পার্টি এবং AIMIM।
মঙ্গলবার দেশে ৭৭তম স্বাধীনতা দিবসের দিনই নেটমাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, মুম্বইয়ের বান্দ্রা টার্মিনাস স্টেশনের মধ্যে এক ছেলেকে মারধর করছে জনতা। তাঁদের চোখে মুখে ঝরে পড়ছে রাগ। ছেলেটিকে কিল, চড়, ঘুশি, লাথি মারার সময় নির্যাতনকারীদের মুখে ছিল জয় শ্রী রাম স্লোগান।
নির্যাতনকারীদের কারও কারও অভিযোগ, হিন্দু মেয়েটিকে ভুলিয়ে অপহরণের ধান্দায় ছিল মুসলিম ছেলেটি। যদিও সেইসব অভিযোগে জল ঢেলে ছেলেটিকে নির্যাতনের সময় মেয়েটিকে ছেলেটিকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে দেখা যায়। এমনকি ওই ভিডিওতে মেয়েটিকে একাধিকবার চিৎকার করে তাঁদের ছেড়ে দেওয়ার কাতর অনুরোধ করতেও শোনা যায়। কিন্তু তারপরেও নির্যাতনকারী দলটি ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান নিয়ে ছেলেটিকে মারতে মারতে তাঁর জামার কলার ধরে স্টেশনের বাইরে নিয়ে যায়। ভিডিওটিতে কারও কারও মুখে এও অভিযোগ শোনা যায় যে, মেয়েটির বয়স মাত্র ১৬ বছর এবং ওই ছেলেটির সঙ্গে সে রাজস্থান থেকে পালিয়ে এসেছে।
এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে সমাজবাদী পার্টির বিধায়ক রইস খান জানিয়েছেন, “বান্দ্রা স্টেশনে লাভ জিহাদের নামে এক অজ্ঞাতপরিচয় নিরস্ত্র মুসলিম ছেলেকে বেধড়ক ও নৃশংসভাবে মারধর করল হিন্দুত্ববাদী গুণ্ডারা। আজ আমরা দেশের ৭৭তম স্বাধীনতা দিবস পালন করছি। আমাদের শহীদরা কখনও ভাবতেও পারেননি মুসলিমদের এই দিনও দেখতে হবে।” এই ঘটনায় অবিলম্বে মুম্বই পুলিশকে তদন্তের দায়িত্বভার নিয়ে এর সঙ্গে যুক্ত সমস্ত ‘গুণ্ডা’দের গ্রেফতার করে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে ‘ভয়ঙ্করতম শাস্তি’ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে অল ইন্ডিয়া মজলিশ-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (AIMIM)-এর জাতীয় মুখপাত্র ওয়ারিশ পাঠান জানিয়েছেন, “বান্দ্রা স্টেশনের ভয়ঙ্কর ঘটনা দেখে গভীরভাবে দুঃখিত। আমাদের সমাজে হিংসা ও ঘৃণার কোনও জায়গা নেই। ধর্ম বা অন্য কোনও কিছুকে কেন্দ্র করে এই ধরণের হিংসার ঘটনা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ওই ভিডিও খতিয়ে দেখে দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার আবেদন জানাচ্ছি।”
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন