মোরবি সেতু কাণ্ডে প্রাণ হারিয়েছেন ৪৭ জন শিশুসহ ১৩৫ জন। আর, তা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিজেপির নেতৃত্বাধীন গুজরাট সরকারের বিরুদ্ধে। কারণ, যে Oreva কোম্পানিকে এই সেতুটি সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের টেন্ডার দেওয়া হয়েছিল, সেই সংস্থার মালিক এবং প্রধান নির্বাহী আধিকারিকদের খোঁজ মিলছে না। এমনকি, কোম্পানির বিস্তীর্ণ খামারবাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে, সেখানে একজন নিরাপত্তা রক্ষীরও দেখা মিলছে না।
স্থানীয় সূত্রে খবর, ওরেভার ম্যানেজিং ডিরেক্টর জয়সুখভাই প্যাটেল (Jaysukhbhai Patel), যিনি প্রকাশ্যে দাবি করেছিলেন - কমপক্ষে আট থেকে দশ বছর সংস্কার করা এই সেতুটির কিছু হবে না (এ দাবির ৪ দিন পরেই সেতুটি ভেঙে পড়ে)। কিন্তু, সেতু বিপর্যয়ের পরে তাঁকে দেখা যায়নি।
জানা যাচ্ছে, কোনও পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই শতাব্দী প্রাচীন মোরবি সেতু (Morbi Bridge) রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার জন্য বরাত পেয়েছে গুজরাটের ‘ওরেভা গ্রুপ’ (Oreva Group)। অভিযোগ, এই পুরোটাই হয়েছে ওরেভা গ্রুপের সাথে বিজেপির যোগাযোগের কারণে।
চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত মোরবি পৌর কর্পোরেশনের অধীনেই ছিল এই সেতুটি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মোরবি পৌর কর্পোরেশনের এক আধিকারিক জানান, পৌরসভার কয়েকজন আধিকারিক এই বিষয়ে (দক্ষতা না থাকা নিয়ে) প্রশ্ন তুলেছিলেন। তবে, রাজনৈতিক সংযোগের কারণে ওরেভাকে বরাতটি দিয়েছিলেন শীর্ষ আধিকারিকরা।
এদিকে জানা যাচ্ছে, এই সেতু বিপর্যয়ের পর রবিবার ভারতীয় দণ্ডবিধির (আইপিসি) বিভিন্ন ধারায় ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন ওরেভার এক নিম্ন আধিকারিক, সেতুটির টিকিট বিক্রেতা এবং নিরাপত্তাকর্মীরা৷ কিন্তু, ওরেভার কোনও শীর্ষ আধিকারিক বা ম্যানেজিং ডিরেক্টর জয়সুখভাই প্যাটেলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেনি পুলিশ।
এই কাণ্ডে গুজরাট সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছে বিরোধী দল থেকে শুরু করে স্থানীয় মানুষেরা। সকলেই অভিযোগ করেছেন, শীর্ষ আধিকারিকদের (মোরবি পৌর কর্পোরেশন ও ওভেরার) রক্ষার জন্য সংস্থার নীচু তলার কর্মীদের বলির পাঁঠা বানানোর চেষ্টা চলছে।
এর আগে মোরবি পৌরসভার চিফ অফিসার সন্দীপ সিং জালা (Sandeepsinh Zala) জানিয়েছিলেন, ‘সেতুটি মোরবি পৌরসভার একটি সম্পত্তি। কিন্তু, কয়েক মাস আগে ১৫ বছরের মেয়াদে সেতুটি রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার জন্য ওরেভা গ্রুপকে দায়িত্ব দিয়েছি আমরা। আমাদের না জানিয়েই দর্শনার্থীদের জন্য সেতুটি উন্মুক্ত করে দিয়েছে এই সংস্থা। তাই, সেতুটির নিরাপত্তা নিরীক্ষা করাতে পারিনি আমরা।’
এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন গুজরাট কংগ্রেসের মুখপাত্র মণীশ দোশি (Manish Doshi)। তিনি বলেন, ‘সবকিছুই তাঁদের হাতে ছিল। ঘটনার পর পৌরসভা কেন কান্নাকাটি করছে? কেন তারা আগে পরীক্ষা করেনি?’
কংগ্রেস নেতা আরও বলেন, ‘কোম্পানীর মালিকের সঙ্গে বিজেপি নেতাদের ঘনিষ্ঠতা সর্বজনবিদিত। তারা বিজেপির একান্ত অনুগত। গুজরাট সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিরা এই দুর্নীতির সাথে জড়িত’।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন