স্বাধীনতার ৭৫ বছরেও দেশজুড়ে থেমে নেই ‘জোরপূর্বক উচ্ছেদ’-এর ঘটনা। গত একবছরে বেড়েছে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা। সম্প্রতি, একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে হাউজিং অ্যান্ড ল্যান্ড রাইটস নেটওয়ার্ক (HLRN)। তাতে জানা যাচ্ছে, ২০২১ সালে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার মিলে সারাদেশে প্রায় ৩৬,৪৮০ টিরও বেশি বাড়ি ভেঙে ফেলেছে। একইসঙ্গে, উচ্ছেদ করা হয়েছে ২০৭,১০৬ জন মানুষকে।
শুধু তাই নয়, ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে, অর্থাৎ গত ৫ বছরে সারা দেশে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ। আর, উচ্ছেদকৃত এই বিপুল সংখ্যক মানুষের মধ্যে ৫৯ শতাংশ এখনও সরকার থেকে কোনো পুনর্বাসন পাননি বলে রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে।
গত বুধবার, দিল্লিতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে ‘ফোর্সড ইভিকশন ইন ইন্ডিয়া: ২০২১’ রিপোর্ট প্রকাশ করে ‘হাউজিং অ্যান্ড ল্যান্ড রাইটস নেটওয়ার্ক’ (HLRN)। তাতে বলা হয়েছে, বর্তমানে সারা দেশে প্রায় ১৫ মিলিয়ন মানুষ উচ্ছেদ ও বাস্তুচ্যুতির হুমকির মধ্যে আছেন।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, চলতি বছর অর্থাৎ, ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত সারাদেশে ২৫,৮০০ টিরও বেশি বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়েছে। যার জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় ১,২৪,৪৫০ জন সাধারণ নাগরিক।
এর মধ্যে ৫৭ শতাংশ মানুষ ২০২১ সালে 'পরিবেশগত' প্রকল্প অর্থাৎ, নদীর তল রক্ষা এবং বন সংরক্ষণের জন্য বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
এছাড়া, বস্তি উচ্ছেদ, দখলদারি, 'নগরের সৌন্দর্যায়ন' এবং 'উন্নয়ন'-এর নামে দেশের মানুষদের উচ্ছেদ করেছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। শুধুমাত্র, পরিকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের নামে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ২৭.১৩% মানুষ।
সৌন্দর্যায়ন প্রকল্পের নামে ১১,৪৩২ টি বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়েছে। এর ফলে ৫৬,১৯০ জন মানুষকে উচ্ছেদ করা হয়েছে।
HLRN রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে যে, ২০২২ সালে উচ্ছেদের একটি ভয়ানক প্রবণতা দেখা দিয়েছে। অনেক রাজ্যেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসাবে বাড়ি ভেঙে দিয়েছে প্রশাসন। রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই ধরনের কর্মকাণ্ড মানবাধিকার আইন ও মানদণ্ডের চরম লঙ্ঘন। এই কর্মকাণ্ড প্রবলভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে প্রভাবিত করে।
রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২১ সালে সুপ্রিম কোর্ট, বিভিন্ন রাজ্যের হাইকোর্ট এবং ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনালের আদালতের আদেশে প্রায় ১ লক্ষেরও বেশি মানুষকে উচ্ছেদ করা হয়েছে।
আর এই ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের কমপক্ষে ২৮ শতাংশ ঐতিহাসিকভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষ। এর মধ্যে রয়েছে- তফসিলি জাতি, তফসিলি উপজাতি, অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণী, যাযাবর সম্প্রদায়, অভিবাসী শ্রমিক এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন