"আমি মেহনাজ কাপ্পান। সাংবাদিক সিদ্দিকী কাপ্পানের মেয়ে। আমার বাবা ভারতের একজন নাগরিক, যাঁর স্বাধীনতাকে হরণ করে তাঁকে অন্ধকার ঘরে বন্ধ করে রাখা হয়েছে।" এভাবেই নিজের স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতা শুরু করলো সিদ্দিকী কাপ্পানের ৯ বছর বয়সী মেয়ে।
সিদ্দিকী কাপ্পান একজন দিল্লি-ভিত্তিক মালায়ালী সাংবাদিক, যিনি UAPA-এর অধীনে গত প্রায় ২ বছর ধরে উত্তরপ্রদেশের একটি জেলে বন্দী রয়েছেন। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে উত্তরপ্রদেশের হাথরাসে উচ্চবর্ণের ব্যক্তিদের দ্বারা এক দলিত নাবালিকার ধর্ষণ ও হত্যার খবর করতে যাওয়ার সময় কাপ্পানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। একাধিকবার জামিনের আবেদন করলেও তা মঞ্জুর হয়নি এখনও। জেলের মধ্যে তাঁর উপর নির্মম অত্যাচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তাঁর পরিবারের।
দীর্ঘ সংগ্রামের পর যে স্বাধীনতা দেশ পেয়েছে, ভারতীয় নাগরিকদের কাছ থেকে তা কেড়ে নেওয়া উচিত নয় বলে জানিয়েছে সিদ্দিকী কাপ্পানের মেয়ে। ভাষণে সে বলে, "ভারত আজ ৭৬ তম স্বাধীনতার বছরে পা দিচ্ছে। এই আনন্দময় মুহূর্তে একজন ভারতীয় হিসেবে অটল গর্ব এবং কর্তৃত্বের সাথে আমি বলতে চাই - ভারত মাতা কি জয়। আজ আমরা যে স্বাধীনতা উপভোগ করছি তা গান্ধীজি, নেহেরু, ভগৎ সিং সহ অগণিত মহান বীর বিপ্লবীদের আত্মত্যাগের ফল।"
"আজ প্রত্যেক ভারতীয়র নিজস্ব পছন্দ রয়েছে। তাঁরা কী খাবে, কী পরবে, কী বলবে, কোন ধর্ম বেছে নেবে - এই সমস্ত কিছু বেছে নেওয়ার এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে তাঁদের। প্রত্যেক ভারতীয়র অধিকার আছে তাঁকে দেশ ছাড়ার হুমকি দিলে তার বিরোধিতা করার। ভারতের মহান জাতির ঐতিহ্য, যা প্রতি বছর ১৫ আগস্ট পুনরুত্থিত হয়, কোনোভাবেই কারও সামনে তা নিয়ে আপোষ করা উচিত নয়। তবে আজও দেশের বিভিন্ন জায়গায় অশান্তির পরিবেশ তৈরি হয় মাঝেমাঝে। ধর্ম-বর্ণ-রাজনীতিকে কেন্দ্র করে এই সহিংসতা ছড়ায়। ভালোবাসা এবং একতা দিয়ে এই সমস্ত আগাছা দূর করতে হবে আমাদের সকলকে। অশান্তির ছায়াটুকুও মুছে ফেলতে হবে। আমরা একসাথে জীবনযাপন করবো", নিজের বক্তৃতায় বলে মেহনাজ।
কেরলের নাত্তাপুরাম স্কুলে পড়ে মেহনাজ কাপ্পান। সোমবার স্কুলে স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে মেহনাজ আরও বলে, "ভারতকে শ্রেষ্ঠত্বের শিখরে নিয়ে যেতে হবে আমাদের। বিভেদ এবং লড়াইবিহীন আগামীর স্বপ্ন দেখতে হবে। ভারতের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করার সমস্ত সাহসী দেশপ্রেমিকদের স্মরণ করে আমি বলছি, ভারতের সাধারণ নাগরিকদের স্বাধীনতা হরণ করা উচিত নয়। জয় হিন্দ, জয় ভারত।"
জেলবন্দী সাংবাদিকের ৯ বছর বয়সী মেয়ের এই বক্তৃতা এই মুহূর্তে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। নেটিজেনদের অনেকেই এই ভিডিও শেয়ার করে সাংবাদিক কাপ্পানের মুক্তির দাবি তুলেছেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন