শুধু যোশীমঠ নয়। উত্তরাখণ্ডের আরও কয়েকটি শহরে নেমে আসতে পারে ‘ভূমি ধসের বিপর্যয়’। রবিবার, এমনই আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
যোশীমঠের মতো যে শহরগুলি ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে, তার মধ্যে রয়েছে- চামোলি জেলার কর্ণপ্রয়াগ ও গোপেশ্বর (যেখানে যোশীমঠ অবস্থিত), তেহরি জেলার ঘানসালি, পিথোরাগড় জেলার মুন্সিয়ারি ও ধারচুলা, উত্তরকাশী জেলার ভাটওয়ারি অঞ্চল। এমনকি, পাউরি ও পর্যটকদের আকর্ষণের জায়গা নৈনিতাল নিয়েও আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন বিশেষজ্ঞ মহল।
হেমবতী নন্দন বহুগুনা গাড়ওয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ববিদ এস পি সতী (SP Sati, Geologist) বলেন, ‘এই শহরগুলি থেকেও ভূমি ধসের খবর পাওয়া গেছে। জমি ফাটল ধরে অনেক জায়গা থেকেই জল বের হচ্ছে। মনে রাখতে হবে, এই অঞ্চলের ভৌগোলিক সংবেদনশীলতা মাথায় না রেখেই এলোমেলো নির্মাণ চলছে। এই শহরগুলিতে অসংখ্য বহুতল বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে।’
তিনি জানান, ‘যোশীমঠের পুনরাবৃত্তি এড়াতে হিমালয় অঞ্চলে নির্মাণ কাজের বিষয়ে নীতিগত হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।’
কর্ণপ্রয়াগ, উত্তরকাশী, নৈনিতাল ও পিথোরাগড়
কর্ণপ্রয়াগ অঞ্চলের বাসিন্দা পঙ্কজ দিমরি (Pankaj Dimri) বলেন, 'আশেপাশের গ্রাম থেকে অনেক মানুষের আগমনের ফলে শহরের জনসংখ্যা বেড়েছে। প্রতি বর্ষায় এখানকার কিছু বাড়ি ডুবে যায়। ২০২১ সালে চারধাম প্রকল্পের জন্য কর্ণপ্রয়াগ সংলগ্ন পাহাড়গুলিকে অবৈজ্ঞানিকভাবে কাটা হয়েছিল। এর ফলে ফাটল তৈরি হয়েছে। কিছু বাসিন্দাকে ইতিমধ্যেই তাঁদের বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হয়েছে।'
স্থানীয় জেলা প্রশাসনও ফাটল পরীক্ষা করে দেখছে। তাঁরা স্বীকার করেছে যে, কর্ণপ্রয়াগে উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য রাস্তা প্রশস্ত করা এবং পাহাড় ভাঙা হয়েছে। এর ফলে শহরের সীমান্তবর্তী এলাকার কিছু জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে।
এদিকে, হর্ষিল উপত্যকায় গঙ্গোত্রী হাইওয়ের ধারে পাহাড় কেটে বাইপাস তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। আর তা নিয়ে, আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা।
প্রকৃতি ধ্বংস করে উন্নয়ন করলে যে বিপদ আসতে পারে, তা নিয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি পাঠিয়েছেন স্থানীয় আপেল চাষী মোহন সিং (Mohan Singh)।
তিনি জানান, 'চরধাম প্রকল্পের অংশ হিসাবে পাহাড়ের নীচে থাকা জঙ্গলের গাছ কেটে একটি বাইপাস করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আর, এই জঙ্গলের পাশেই রয়েছে আমাদের গ্রাম। আমরা আশঙ্কা করছি, এই পদক্ষেপ পাহাড়কে আরও অস্থির করে তুলবে। পরিবেশ ছাড়াও, এই প্রকল্পের ফলে গ্রামীণ অর্থনীতি, স্থানীয় মানুষজনের জীবন-জীবিকা, সবই হুমকির মধ্যে রয়েছে।'
উন্নয়নের নামে গাছ কাটার ভয়াবহতা নিয়ে ২০১৯ সালে রাজ্য সরকারকেও চিঠি লিখেছিলেন পি এল শাহ (PL Shah) নামে এক জেলা আধিকারিক। চিঠিতে হুঁশিয়ারির সুরে তিনি জানিয়েছিলেন, 'মুড়িমুড়কির মতো গাছ কাটার ফলে সংবেদনশীল এই অঞ্চলের জমি তলিয়ে যাবে।' কিন্তু, তারপরেও কোনও সতর্কতাকে গুরুত্ব দেয়নি বিজেপি শাসিত উত্তরাখণ্ড সরকার।
এদিকে, পরিবেশ উন্নয়ন ও গবেষণা কেন্দ্রের (CEDR) পরিচালক বিশাল সিং (Vishal Singh) জানিয়েছেন, হিমালয়ের বহুতল পাহাড়ী শহর নৈনিতালও যোশীমঠের মতো পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন