জ্ঞানব্যাপী বিতর্কে আরএসএস (RSS) প্রধান মোহন ভাগবতের মন্তব্য ঘিরে দুই শিবিরে ভাগ হয়ে গেছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ (National Democratic Alliance- NDA)-এর সমর্থকরা। অনেকেই সংঘ প্রধানের মন্তব্যকে সমর্থন জানালেও, এনডিএ সমর্থকদের একটা বড় অংশ ভাগবতের বক্তব্যের সঙ্গে সহমত হতে পারেনি।
জ্ঞানব্যাপী নিয়ে আরএসএস প্রধানের মন্তব্য সাধারণ ভারতীয়দের উপর প্রভাব ফেলেছিল কিনা, তা জানতে যৌথভাবে একটি সমীক্ষা চালায় সংবাদ সংস্থা আইএএনএস (IANS) এবং সি-ভোটার (CVoter)। এতে একটি মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গেছে।
সামগ্রিকভাবে, মোট উত্তরদাতার ৩৬.৪ শতাংশ মানুষ মনে করেন ভাগবত সঠিক বিবৃতি দিয়েছেন। ৩৪.৮ শতাংশ মানুষ জ্ঞানব্যাপী বিতর্ক নিয়ে ভাগবতের মন্তব্যে একমত নন। কোনো মতামত দিতে চাননি ২৯ শতাংশ মানুষ।
অন্যদিকে, মোদী সরকারের (এনডিএ) সমর্থকদের মধ্যে ৩৯ শতাংশ মনে করেন বিতর্ক থামাতে সময়োপযোগী মন্তব্য করেছেন সঙ্ঘ প্রধান ভাগবত। তবে, এই প্রশ্নে ভাগবতের সঙ্গে একমত নন ৩৩ শতাংশ এনডিএ সমর্থকেরা।
সমীক্ষায় আরও জিজ্ঞাসা করা হয় - মোহন ভাগবতের বিবৃতিটি কি বিরোধ থামিয়ে উভয় (হিন্দু ও মুসলিম) পক্ষকে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সমাধানে পৌঁছাতে সাহায্য করবে? উত্তরে, উত্তরদাতাদের ৫১ শতাংশ জানান, ভগবতের মন্তব্য দুই পক্ষের বিরোধের সমাধানে সাহায্য করবে। অন্যদিকে, ২২ শতাংশ ভিন্নমত পোষণ করেছেন। উত্তর দিতে চাননি প্রায় ২৮ শতাংশ মানুষ।
অন্যদিকে ৪২ শতাংশের বেশি এনডিএ বিরোধী সমর্থকরা মনে করেন, মোহন ভাগবতের মন্তব্য জ্ঞানব্যাপী বিতর্কে জল ঢালতে খুব একটা সাহায্য করবে না।
আসলে কি বলেছিলেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত?
গত শুক্রবার নাগপুরের এক সভায় আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত বলেন, 'জ্ঞানবাপী নিয়ে এখন বিতর্ক চলছে। তার একটা ইতিহাস আছে। কিন্তু ইতিহাসকে বদলানো যাবে না। এই ইতিহাস আমি বা এখন যারা নিজেদেরকে হিন্দু বলে পরিচয় দেয় তারাও সৃষ্টি করেনি বা আজকের মুসলমানরা সৃষ্টি করেনি।'
একইসঙ্গে তিনি বলেন, 'জ্ঞানবাপী নিয়ে আমাদের ভক্তি-শ্রদ্ধা থাকতেই পারে। কিন্তু তা বলে প্রত্যেক মসজিদেই কেন শিবলিঙ্গ খোঁজা হবে? রোজ মামলা করলে কী করে হবে? আমরা কেন ঝগড়া করব? এ নিয়ে আমাদের আদৌ বিতর্ক বাড়ানো উচিত নয়।'
রাম মন্দির ইস্যু টেনে এদিন আরএসএস প্রধান বলেন, 'নভেম্বর মাসে রাম জন্মভূমি নিয়ে কথা বলেছিলাম আমি। তখন এটি একটা ঐতিহাসিক বিষয় ছিল। সেটাতে আমরা সফল হয়েছি। তাই, আর নতুন কোনো আন্দোলন চাই না। ভালো কথা হল, সকলের উচিত নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়া।'
আর ভাগবতের এই মন্তব্য ঘিরেই তোলপাড় হয়েছে নেটপাড়া থেকে ভারতের রাজনৈতিক মহল।
এ প্রসঙ্গে কংগ্রেস মুখপাত্র বিবেক তঙ্খা জানিয়েছেন, 'মোহন ভাগবত ওই বার্তা তাঁর দলীয় কর্মী ও হিন্দুত্ববাদীদের জন্য দিয়েছেন। কারণ, তাঁরাই ওই বিষয়গুলি ধারাবাহিক ভাবে খুঁচিয়ে তুলছেন। আমজনতা সব জানে ও বোঝে। ভাগবত বরং কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের বোঝান, এ ধরনের পদক্ষেপ আদৌ দেশের একতার জন্য ভাল নয়। মন্দির-মসজিদের পরিবর্তে বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধির সমস্যার সমাধান, নারী-ওবিসি সমাজের উত্থান অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।'
-with IANS inputs
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন