নীট পরীক্ষায় দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আরও একবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ করলেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী। মঙ্গলবার এক এক্স (পূর্বতন ট্যুইটার) বার্তায় নীট দুর্নীতির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মৌনতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন।
এদিনের এক্স বার্তায় রাহুল বলেন, “বরাবরের মতো, নরেন্দ্র মোদী NEET পরীক্ষায় ২৪ লক্ষেরও বেশি শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত নিয়ে ছিনিমিনি খেলার বিষয়ে নীরবতা বজায় রেখেছেন।”
কংগ্রেস সাংসদ বলেন, “বিহার, গুজরাট এবং হরিয়ানা থেকে হওয়া গ্রেপ্তারগুলি স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয় যে পরীক্ষায় নিয়মতান্ত্রিকভাবে সংগঠিত দুর্নীতি হয়েছে এবং এই বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি প্রশ্নপত্র ফাঁসের কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের ন্যায়পত্রে আমরা প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিরুদ্ধে কঠোর আইন করে তরুণদের ভবিষ্যত সুরক্ষিত করার নিশ্চয়তা দিয়েছিলাম। বিরোধী দলের দায়িত্ব পালন করে সারাদেশের যুবসমাজের আওয়াজ রাজপথ থেকে সংসদ পর্যন্ত জোরালোভাবে তুলে ধরে এবং সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে আমরা এ ধরনের কঠোর নীতিমালা প্রণয়নে অঙ্গীকারবদ্ধ।”
অন্যদিকে এদিনই নীট দুর্নীতি সংক্রান্ত এক মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিক্রম নাথ এবং বিচারপতি এসভিএন ভাট্টির ডিভিশন বেঞ্চ জাতীয় পরীক্ষা নিয়ামক সংস্থা বা এনটিএ-র উদ্দেশ্যে জানিয়েছে, পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা সংস্থা হিসেবে সমস্ত বিষয় স্বচ্ছ রাখা উচিত। যদি কোনো ভুল হয় তাহলে স্বীকার করে নেওয়া উচিত যে ভুল হয়েছে। এই ভুলের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। অন্তত আপনাদের আচরণ দেখে একটা আস্থা তৈরি হতে পারে।
সুপ্রিম কোর্ট আরও জানিয়েছে, যদি ০.০০১ শতাংশ ভুলও ধরা পরে তাহলেও কোনও অবহেলা করা উচিত নয়। তদন্ত করা উচিত। কারণ দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশিকা পরীক্ষায় একজনও যদি প্রতারণা করে চিকিৎসক হয়ে ওঠেন তাহলে সমাজের জন্য তা আরও ক্ষতিকারক। পরীক্ষার্থীরা নিট পরীক্ষার জন্য প্রচুর কষ্ট করে। তাদের ভবিষ্যত নিয়ে সকলের ভাবা উচিত।
এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ৮ জুলাই।
এর আগে গত ১৫ জুন এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান বিরোধীদের নিশানা করে বলেন, “নিট বাতিলের প্রয়োজনীয়তা কী? এর নেপথ্যে বিরোধীদের একটি স্বার্থ রয়েছে। গত বছরের নিটে যিনি প্রথম হয়েছিলেন, তিনি তামিলনাড়ুর পড়ুয়া। তামিলনাড়ুর এক গ্রামের বাসিন্দা। আসল অভিযোগ কী, সেটাই বোঝা যাচ্ছে না।”
গত ৪ জুন নিটের ফল প্রকাশিত হয়েছে। যে ফলাফল অনুসারে ৬৭ জন পরীক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বর মোট নম্বরের সমান, অর্থাৎ ৭২০। আবার এমন অনেক পরীক্ষার্থী আছে যারা ৭১৭, ৭১৮ নম্বর পেয়েছে। কিন্তু নেগেটিভ মার্কিং দিলে ৭১৭ বা ৭১৮ নম্বর কোনোভাবেই একজন পরীক্ষার্থী পেতে পারে না। এনটিএ জানিয়েছিল ওই প্রার্থীদের গ্রেস মার্কস দেওয়া হয়েছে। এরপরেই দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আদালতে মামলা দায়ের হয় এবং ১৫৬৩ জনের পরীক্ষা বাতিল করে তাদের পুনরায় পরীক্ষা দেবার জন্য বলা হয়।
এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য, ভারতে ৪৭০০ কেন্দ্রে এবং ভারতের বাইরে ১৪টি কেন্দ্রে ১৩টি ভাষায় এই প্রবেশিকা পরীক্ষা নেওয়া হয়। পরীক্ষা দেন ২৩ লক্ষেরও বেশি পরীক্ষার্থী। তিনি বলেন, “দু’টি কেন্দ্র নিয়ে কিছু অভিযোগ উঠেছে। যাঁরা দুর্নীতি করেছেন, তাঁদের অবশ্যই কঠিন শাস্তি হবে।”
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন