নতুন করে হিংসা ছড়ালো মণিপুরে। সন্দেহভাজন জঙ্গিদের গুলিতে নিহত হয়েছেন তিনজন গ্রামবাসী। মৃতদের মধ্যে দু'জন আবার সম্পর্কে বাবা ও ছেলে। পরিস্থিতি কার্যত নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এর জন্য কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীকে দায়ী করেছেন স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক।
ঘটনাটি ঘটেছে মণিপুরের বিষ্ণুপুর জেলার উখা তামপাক গ্রামে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাত ২টোর সময় গ্রামে প্রবেশ করে জঙ্গিরা। নির্বিচারে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে থাকে। তাদের গুলিতেই নিহত হয় তিন নিরস্ত্র গ্রামবাসী।
পুলিশ সূত্রে খবর, আততায়ীরা চুরাচাঁদপুর এলাকা থেকে এসেছিল। ঘুমন্ত অবস্থাতেই ওই তিনজনকে গুলি করে তারা। পরে তরোয়াল দিয়ে কোপানো হয়েছিল। একটি বাড়িতে বাবা-ছেলেকে হত্যা করা হয় এবং তার পাশের বাড়িতে আর একজনকে হত্যা করা হয়।
বিপুল সংখ্যক আধাসামরিক বাহিনী দ্বারা বেষ্টিত পাহাড় ও উপত্যকার মধ্যবর্তী বাফার জোন টপকে কিভাবে জঙ্গিরা গ্রামে প্রবেশ করলো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এই ঘটনায় কেন্দ্রীয় বাহিনীকে আক্রমণ করেছেন মণিপুরের বিজেপি বিধায়ক তথা মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং-এর জামাই রাজকুমার ইমো সিং। নিরাপত্তায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে কর্তব্যরত আধাসামরিক বাহিনীকে সাসপেন্ড করার দাবি তুলেছেন তিনি।
তিনি বলেন, "আমরা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে (অমিত শাহ) নিয়মিত চিঠি লিখছি যে, নির্দিষ্ট কয়েকটি নিরাপত্তা বাহিনী জনগণ এবং রাজ্যের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি করছে। কারা জঙ্গিদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করছে, কেন্দ্রীয় সরকারকে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। সহিংসতা বন্ধ করতে কেন্দ্রকে অবশ্যই অবিলম্বে কিছু কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে, অন্যথায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে সহিংসতা চলছে। মণিপুরে শান্তি ফেরানো প্রয়োজন।"
জানা গেছে, মণিপুরের সেনাবাহিনীর বিভিন্ন চেক পোস্ট থেকে বন্দুক ও গুলি লুঠ করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি পশ্চিম ইম্ফলে এক পুলিশ আধিকারিকের মৃত্যুর খবরও সামনে আসছে। ওই পুলিশ কর্মীর মাথায় স্নাইপার দিয়ে গুলি করা হয়।
অন্যদিকে বিষ্ণুপুরের কাংভাই এবং ফৌগাকচাও এলাকায় সেনাবাহিনী ও র্যাফের মধ্যেও ব্যাপক সংঘর্ষের ফলে ২৫ জনেরও বেশী মানুষ আহত হয়। চুরাচাঁদপুর সহ মণিপুরের বিভিন্ন জেলায় কুকি-ঝোমি সংগঠন গণকবর দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল। তা নিয়েও উত্তেজনা ছড়ায়। আপাতত সেই পরিকল্পনা স্থগিত রাখা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, কুকি ও মেইতেই গোষ্ঠীর অন্তর্দ্বন্দ্বে গত ৩ মে থেকেই উত্তপ্ত গোটা মণিপুর। গোষ্ঠী সংঘর্ষে উত্তপ্ত মণিপুরে ইতিমধ্যেই ১৫০-এরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। ঘরছাড়া প্রায় ৫০ হাজার। পাশাপাশি নিখোঁজের সংখ্যাও বাড়ছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য জুড়ে নিখোঁজের প্রায় ৬০০০টি এফআইআর দায়ের হয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন