'প্রধানমন্ত্রী ভূত দেখছেন', 'কলমধারী নকশাল' মন্তব্যে মোদীকে নিশানা বিরোধীদের

মোদীর এই মন্তব্যের মধ্যে বিরোধী কণ্ঠ দমনের আভাস রয়েছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন দিল্লির গান্ধী পিস ফাউন্ডেশনের আইনজীবী, অধ্যাপক, সমাজকর্মীরা।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ফাইল ছবি উইকিপিডিয়ার সৌজন্যে
Published on

'বন্দুকধারী'-দের সাথে সাথে 'কলমধারী নকশালদের'ও ঠেকানোর ডাক দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শুক্রবার, বিভিন্ন রাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীদের নিয়ে হওয়া বৈঠকে মোদী বলেন, 'সব ধরনের নকশালবাদকে পরাস্ত করতে হবে আমাদের, সে বন্দুকধারীই হোক বা কলমধারী। ওদের জন্য সমাধান বার করতে হবে।'

মোদীর এই মন্তব্যের মধ্যে বিরোধী কণ্ঠ দমনের আভাস রয়েছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন দিল্লির গান্ধী পিস ফাউন্ডেশনের আইনজীবী, অধ্যাপক, সমাজকর্মীরা।

তাঁরা অভিযোগ করেছেন, সমালোচকদের এতদিন 'শহুরে নকশাল' বলে দাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে মোদী সরকার। এখন গুজরাটের ভোট এগিয়ে আসতেই প্রধানমন্ত্রী তাঁদের 'কলমধারী নকশাল' বলে দাগিয়ে দিচ্ছেন।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কলিন গঞ্জালভেস বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী যখন কলমধারী নকশালবাদের কথা বলছেন, তখন তাঁর উচিত এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের একাধিক রায় পড়ে দেখা। সুপ্রিম কোর্ট একের পর এক রায়ে কলমের অপ্রতিরোধ্য অধিকারের কথা বলেছে।' তিনি অভিযোগ করেন, সরকার আসলে বাক্‌স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে চাইছে। যাতে সমালোচকদের মুখ বন্ধ করা যায়।

এদিকে, এই ইস্যুতে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেন, 'প্রকৃত নকশাল বলতে কাকে বোঝানো হচ্ছে, তা সরকারকে আগে বলতে হবে। সরকারের বিরুদ্ধে যে কোনও কথা, সমালোচনাকেই নকশালবাদ বলে দাগিয়ে দেওয়া হতে পারে। সমালোচনা বন্ধ করতে মোদী সরকার সব শক্তি প্রয়োগ করে চলেছে। যে বিরোধিতা করবে, সে হয় নকশাল, নয় পাকিস্তানি, নয় সন্ত্রাসবাদী।'

সিপিআইএম নেতা শমীক লাহিড়ি বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী ভূত দেখছেন। যে ওঁর বিরোধিতা করবেন, তাঁকেই মাওবাদী বলে দেওয়া হচ্ছে। ফ্রিজে কী খাবার রয়েছে, তার জন্য পিটিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে। এই নিয়ে কোনও কথা নেই ওঁর মুখে। যে ওঁর বিরুদ্ধে কথা বলবেন, তিনি কবি হোন, সাহিত্যিক হোন, সাংবাদিক হোন, বিরোধী রাজনীতিক হোন, তাঁদের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর আক্রমণ নামিয়ে আনছেন। স্বৈরশাসনের পদক্ষেপ শোনা যাচ্ছে বলে তাই মন্তব্য করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি।'

কলমধারী নকশালবাদ ও UAPA

মাওবাদী সন্দেহে দীর্ঘদিন জেলবন্দী রয়েছেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক জি এন সাইবাবা। তাঁর বিরুদ্ধে UAPA ধারায় মামলা দায়ের করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা CBI।

এরই মাঝে, শুক্রবার, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, 'কেন্দ্রীয় আইন হিসাবে UAPA সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একটি সিস্টেমকে লড়াইয়ের প্রেরণা দিয়েছে।'

আর মোদীর এই মন্তব্যকে একহাত নিয়েছেন AIMIM প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসি (Asaduddin Owaisi)। টুইটারে তিনি লিখেছেন, '২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে UAPA- আইনে ৪,৬৯০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। কিন্তু, তার মধ্যে মাত্র ৩% দোষী সাব্যস্ত হয়েছে।'

ওয়াইসি বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী ঠিক বলেছেন, UAPA- তাঁর সরকারকে জবাবদিহিতা ছাড়াই কাউকে জেলে যাওয়ার ক্ষমতা দেয়। UAPA একটি খারাপ আইন। এটি সন্ত্রাস বন্ধ করতে পারে না।'

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী
তেলেঙ্গানায় বিধায়ক কেনাবেচা মামলায় নয়া মোড়, অডিও ক্লিপ প্রকাশ TRS-র

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in