নাগাল্যান্ডের সেনার গুলিতে গ্রামবাসীদের মৃত্যুর পর শেষ হল সাত দিনের শোক পালন পর্ব। আপাতত ওই যুবকরা যাঁরা বড়দিনের উৎসবে পরিবার মুখে হাসি ফোটানোর জন্য অবিরাম চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন, তাঁরা আজ কবরে শায়িত। তাই আধা সেনা ও সেনার গতিবিধির উপর নিষেধাজ্ঞা তুলল না নাগাল্যান্ডের মন জেলার কনিয়াক জনগোষ্ঠী। সেই ঘটনার সমাধানও এখনও মেলেনি।
খ্রিস্টান রাজ্য নাগাল্যান্ডে ২৫ ডিসেম্বরের আগেই কেন্দ্র ও সংগঠন গুলির মধ্যে আলোচনায় সমস্যা সমাধান হবে বলে আশা করা হচ্ছিল। কিন্তু শান্তি আলোচনা আপাতত অধরাই। নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে সম্পূর্ণ অসহযোগিতার ডাক দিয়েছে তারা। অর্থাৎ বড়দিনের সব উৎসব, বনভোজন, ভোজসভা ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান হবে না।
সেনার গুলিতে নিহতদের পরিবারের জন্য কেন্দ্র ক্ষতিপূরণ বাবদ টাকা পাঠায়। কিন্তু ক্ষতিপূরণের প্রথম কিস্তির টাকা ফিরিয়ে দিয়েছেন গ্রামবাসীরা। তাদের পাশে দাঁড়িয়ে এবার কনিয়াকদের সব সংগঠন একজোট হয়ে আফস্পার বিরোধিতায় সরব হল। সংগঠন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, যত দিন না নাগাল্যান্ড থেকে সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন অর্থাৎ আফস্পা প্রত্যাহার করা হচ্ছে, সেখানে নিরাপত্তাবাহিনীর টহলদারি বরদাস্ত করা হবে না।
কনিয়াকদের সংগঠন আরও জানিয়েছে, মন জেলা থেকে আর সেনা নিয়োগ করা যাবে না। কোনও কনিয়াক তরুণ এই পরীক্ষায় অংশ নেবেন না। যে গ্রামবাসীরা স্থানীয় সেনাবাহিনীকে অনুষ্ঠান বা অন্য কোনও কাজে জমি লিজ দিয়েছিল, অবিলম্বে তা ফেরত দেওয়ার জন্য নিরাপত্তা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই জেলায় নিরাপত্তাবাহিনীর কোনও রকম উপস্থিতি বরদাস্ত করা হবে না, তা এই নির্দেশেই স্পষ্ট।
সেনা যদি গ্রাম পরিষদ, ছাত্র সংগঠনের উন্নয়ন প্রকল্পে সাহায্য দেয়, তা গ্রহণ করা হবে না। সেনা বা সরকারের সব প্যাকেজ ও সাহায্যও ফিরিয়ে দেওয়া হবে। কনিয়াক এলাকাগুলিতে সব গাড়ি, দফতর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে কালো পতাকা উড়বে। এককথায়, ভারতীয় সেনার সঙ্গে জনতার সব ধরনের সম্পর্ক মুছে দেওয়া হল।
প্রসঙ্গত, কয়েকদিন আগে সেনাবাহিনীর গুলিতে নিরীহ গ্রামবাসীদের মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ ওঠে নাগাল্যান্ডে। যদিও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল যে, তারা শ্রমিকদের ওই গাড়িটিকে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু তা না দাঁড়ানোয় গুলি চলে। ধাওয়া করলে গুলি লাগত পিছন দিক থেকে। কিন্তু গুলি লাগে সামনের দিকে থেকে। নাগা পুলিশের রিপোর্টের সঙ্গে সরকারি রিপোর্ট সম্পূর্ণ আলাদা হয়। ফলে বিতর্ক আরও জোরাল হয়।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন