২০১৭ সালে, ইজরায়েলের কাছ থেকে পেগাসাস (Pegasus) স্পাইওয়্যার ও সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি কিনেছিল ভারতের গোয়েন্দা ব্যুরো (IB)। ৩ লক্ষ ১৫ হাজার ডলারের বিনিময়ে এটি (Pegasus) কিনেছে মোদী সরকার। বৃহস্পতিবার, এই দাবি করেছে অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রোজেক্ট (Organized Crime and Corruption Reporting Project)।
এই তথ্য সামনে আসার পরেই পেগাসাস নিয়ে সম্পূর্ণ তদন্ত রিপোর্ট (যে রিপোর্ট সুপ্রিম কোর্টের কাছে জমা পড়েছে) প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। টুইটারে তিনি জানান, ‘আদালত নিশ্চয়ই এই রিপোর্ট নজরে আনবে। সাংবিধানিক পদ্ধাতিতেই মোদী সরকারকে দায়ী করতে হবে। কার দায়িত্ব তা চিহ্নিত করতে হবে। #পেগাসাস ইন্ডিয়া।’
এর আগে ২০২১ সালের জুলাই মাসে অভিযোগ ওঠে, ইজরায়েলের এনএসও সংস্থার তৈরি পেগাসাস (Pegasus) স্পাইওয়্যারের মাধ্যমে নজরদারি চালানো হয়েছে বিশ্বের দেশে। এই তালিকায় ভারতেরও নাম জড়ায়। অভিযোগ ওঠে, ভারতের সাংবাদিক, বিরোধী রাজনৈতিক নেতা, সমাজকর্মীদের মোবাইলে গোপনে এই স্পাইওয়্যার ঢুকিয়ে আড়ি পাতা হয়েছে। তাঁদের টেলিফোন কথাবার্তা, সোসাল মিডিয়ার বার্তা আদান-প্রদান, ব্যক্তিগত কথাবার্তা সবই নজরদারি করা হয়েছে ‘পেগাসাস’এর মাধ্যেমে। জানা যায়, এই স্পাইওয়্যারটি এমনই যে যেমন গোপনে তা মোবাইলে ঢুকিয়ে দেওয়া যায়, তেমন গোপনেই তা সরিয়ে নেওয়া যায়।
এই নিয়ে দেশব্যাপী হইচই হলে শীর্ষ আদালতে মামলা হয়। এরপর, ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর, পেগাসাস তদন্তের জন্য অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আর ভি রভেন্দ্রনের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। প্রায় ১০ মাস পর ২০২২ সালের ২৫ আগস্ট, সেই কমিটি আদালতে নিজেদের তদন্ত রিপোর্ট পেশ করে। কিন্তু, তদন্ত কমিটির সেই রিপোর্ট সম্পূর্ণ জনসমক্ষে আনেনি শীর্ষ আদালত। আদালত শুধু জানিয়েছে, তদন্ত কমিটিকে সহযোগিতা করেনি কেন্দ্রীয় সরকার।
জানা যায়, শীর্ষ আদালতে সরকার জানায়নি তারা ওই স্পাইওয়্যার কিনেছে কিনা। নিজেদের হলফনামায় ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ কিছুই বলেনি সরকার।
অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রোজেক্ট (OCCRP) বাণিজ্যিক তথ্য বিশ্লেষণ করে OCCRP জানিয়েছে, ২০১৭র এপ্রিলে ভারত সরকারের গোয়েন্দা ব্যুরোকে এনএসও পেগাসাস পাঠিয়েছিল। বিমানে পাঠানো হয়েছিল। প্রতিরক্ষা ও সামরিক ব্যবহারের জন্য' চিহ্নিত করে ওই স্পাইওয়্যার ও সংশ্লিষ্ট যন্ত্র পাঠানো হয়েছিল। ৩১৫,০০০ ডলার মূল্যের ওই সরবরাহ ইজরায়েল থেকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম আমদানির অংশ ছিল।
নিউ ইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল ভারত ২০১৭-র এপ্রিলে পেগাসাস কেনে। তাদের প্রতিবেদনের বিবরণের সঙ্গেও এই রিপোর্ট হুবহু মিলে যাচ্ছে। ২০১৭-র ফেব্রুয়ারিতে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ইজরায়েল সফরে যান। তখনই পেগাসাস কেনার কথা পাকা হয়। সে বছরের জুলাইয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে ইজরায়েল সফরে গিয়েছিলেন।
পেগাসাসের নির্মাতা ইজরায়েলী সংস্থা এনএসও কোনও দেশের সরকার বা সরকারি তদস্ত সংস্থা ছাড়া কাউকে এই স্পাইওয়্যার বিক্রি করে না। ইজরায়েলের সরকারের অনুমতি ছাড়া তারা কাউকে এই নজরদারি স্পাইওয়্যার বিক্রি করে না। এ বছরের গোড়ায় নতুন সেই তথ্য সংবাদমাধ্যমের সামনে আসে।
দেখা যায়, ভারতের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক স্তর থেকেই এই স্পাইওয়্যার কেনার জন্য আগ্রহ ও তৎপরতা দেখানো হয়েছে। সেইসূত্রেই ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার সর্বোচ্চ স্তর থেকে ইজরায়েলের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই সামরিক স্তরের স্পাইওয়্যার কেনা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের কমিটি যে রিপোর্ট পেশ করেছিল তা দীর্ঘ। সমগ্র রিপোর্টটি প্রকাশ করা হয়নি। পরে করা হবে বলে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল। এখন নতুন করে এই তথ্য সামনে আসার পরে সমগ্র রিপোর্ট প্রকাশের দাবি আবার সামনে এসেছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন