দুই ভারতীয় সাংবাদিকের ফোনে পেগাসাস স্পাইওয়্যারের উপস্থিতি সংক্রান্ত প্রতিবেদন ‘অর্ধ সত্য’ বলে জানালেন কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয় ভারত সরকার দেশের শীর্ষ স্থানীয় কিছু সাংবাদিকের ওপর পেগেসাস ব্যবহার করছে। বৃহস্পতিবার এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর ওই প্রতিবেদনের দাবি উড়িয়ে দিয়ে বলেন, প্রতিবেদনটি অর্ধসত্য, সাজানো এবং সৃজনশীল কল্পনা মিশিয়ে লেখা হয়েছে। নিজের এক্স হ্যান্ডেলে তিনি লেখেন, “@washingtonpost-এর ভয়ানক গল্প প্রত্যাখ্যান করা ক্লান্তিকর, কিন্তু কাউকে এটা করতেই হবে...এই গল্পটি অর্ধেক সত্য, সম্পূর্ণরূপে সাজানো হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, অ্যাপলকে Cert-in-এর তদন্তে যোগ দিতে বলা হয়েছিল। সেই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং তদন্ত চলছে।
দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট-এর প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, "অ্যাপল অক্টোবরে স্বাধীন ভারতীয় সাংবাদিক এবং বিরোধী দলের রাজনীতিবিদদের সরকারি হ্যাকাররা সম্ভবত তাদের আইফোন হ্যাক করার চেষ্টা করেছিল জানিয়ে সতর্ক করার একদিন পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অধীনস্থ আধিকারিকরা তাৎক্ষণিকভাবে অ্যাপলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন।"
যে বক্তব্য উদ্ধৃত করে মন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর বলেন, ভারত সরকার এবং তথ্যপ্রযুক্তি দপ্তরের পক্ষ থেকে জানাই যে অ্যাপলের দেখা উচিত তাদের ডিভাইসগুলি দুর্বল কিনা এবং এই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কী বলা হয়েছে তা তাদেরই ব্যাখ্যা করা উচিত। এক্স হ্যান্ডেলে তাঁর বার্তার শেষে তিনি জানান, বাকি গল্পটি সৃজনশীল কল্পনা এবং সাংবাদিকতা করার সময় ক্লিকবাইট।
মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনের বক্তব্য অনুসারে, সিদ্ধার্থ বরদারাজন এবং দ্য অরগানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট-এর সাউথ এশিয়া এডিটর আনন্দ মাংনালের আই ফোনে সাম্প্রতিক সময় পেগাসাস স্পাইওয়্যারের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। চলতি বছরের অক্টোবর মাসে এঁদের ফোনে পেগাসাস স্পাইওয়ারের উপস্থিতি ধরা পড়ে। এর আগেই অ্যাপলের পক্ষ থেকে এঁদের কাছে সতর্কবার্তা আসে।
জানা গেছে, অ্যাপলের সতর্কবার্তা এবং পরবর্তী সময় দুই সাংবাদিকের ফোনে স্পাইওয়্যার পেগাসাসের উপস্থিতি ধরা পড়ার পর অ্যাপলের ভারতীয় কর্তাকে তলব করে কেন্দ্রীয় সরকার। আইফোনের গ্রাহকদের কেন ওই বার্তা পাঠানো হয়েছে তা জানতে চাওয়া হয়। অ্যাপলের সেই আধিকারিকের বক্তব্যে সন্তুষ্ট না হয়ে এরপর সংস্থার সদর দপ্তর থেকে ডেকে পাঠানো হয় অন্য এক আধিকারিককে। আমেরিকার এক সংবাদমাধ্যমে সেই আধিকারিক জানিয়েছেন, ভারত সরকারের প্রতিনিধিরা বেশ রাগতস্বরেই তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
অক্টোবর মাসে অ্যাপলের কাছ থেকে যাদের উদ্দেশ্যে সতর্কবার্তা এসেছিল সেইসব সাংবাদিকদের আইফোন পরীক্ষা করে তাতে পেগাসাস স্পাইওয়্যারের উপস্থিতি খুঁজে পায় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। এই সাংবাদিকরা সরকারের কড়া সমালোচক। এঁদের মধ্যে এক সাংবাদিক গৌতম আদানির বিষয়ে তদন্তমূলক প্রতিবেদন লেখেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন