গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের জেরে জ্বলছে মণিপুর। পুড়ছে ঘর-বাড়ি, ঘরছাড়া অসংখ্য মানুষ। রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রেখে শান্তি ফেরাতে ব্যর্থ মণিপুরের বিজেপি সরকার। কিন্তু এত কিছুর পরেও রবিবারের ‘মন কী বাত’-এ জ্বলন্ত মণিপুর নিয়ে রা’ও কাড়লেন না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
এমনকি বিদ্রোহীরা তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্য বিদেশ প্রতিমন্ত্রী রাজকুমার রঞ্জন সিং-এর বাড়ি পুড়িয়ে দিলেও এ নিয়ে কোনও কথা তুললেন না প্রধানমন্ত্রী। এই মৌনতায় ব্যাপক ক্ষুব্ধ মণিপুরবাসী রবিবার প্রধানমন্ত্রীর মাসিক রেডিও প্রোগ্রাম ‘মন কী বাত’ চলাকালীনই রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ দেখালেন। রাজপথে আছাড় মেরে ভাঙেন ট্রানজিস্টার রেডিও। পোস্টার হাতে স্লোগান দিয়ে মিছিল করেন, মশাল নিয়ে মানববন্ধন করেন। এমনকি ‘মন কী বাত’ শুনবেন না বলে কানে হাত দিয়েও এদিন বিক্ষোভ দেখান রাজ্যবাসী।
গত একমাস ধরেই মেইতেই ও কুকি জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষে উত্তপ্ত উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য মণিপুর। পুড়ে ছাই হয়েছে অসংখ্য বাড়ি, আশ্রয় হারিয়েছেন বহু মানুষ। সরকারি হিসেব অনুযায়ী, শতাধিক মানুষ গত এক মাসে প্রাণ হারিয়েছেন। রাজ্যে শান্তি ফেরাতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ মুখ্যমন্ত্রী বীরেন্দ্র সিং-এর সরকার। মণিপুর সফরে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ শান্তির বার্তা দিয়ে এলেও তাতে চিঁড়ে ভেজেনি। বরং বিক্ষোভকারীরা পাল্টা বিদেশমন্ত্রী রাজকুমার সিং-এর মণিপুরের বাসভবন জ্বালিয়ে দেয়। শনিবার রাজ্যের মন্ত্রী বিশ্বজিৎ সিং-এর বাড়িও পুড়িয়ে দিতে যায় তাঁরা। সেখানে বাধা পেয়ে ভাঙচুর চালায় তাঁরা। এত ঘটনাপ্রবাহের পরেও রবিবার এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা মণিপুরবাসীর মধ্যে নতুন করে ক্ষোভের আগুন উসকে দেয়।
রবিবার প্রধানমন্ত্রীর ‘মন কী বাত’ শোনানোর জন্য রাজ্য বিজেপির তরফে রাজধানী ইম্ফল-সহ বিভিন্ন জায়গায় এলাহি আয়োজন করা হয়েছিল। মণিপুরবাসীও এই অনুষ্ঠান বয়কট করার জন্য তৈরিই ছিলেন। রবিবার সকাল থেকেই হাতে পোস্টার নিয়ে মুখে মাস্ক পরে তাঁরা দলে দলে রাস্তায় জড়ো হন। ইম্ফলের ইন্দো-বার্মা রোডে এক বিক্ষোভকারী রাস্তায় আছাড় মেরে একটি ট্রানজিস্টার রেডিও ভেঙে প্রতিবাদ দেখান। রাস্তায় নেমে প্ল্যাকার্ড ও মশাল হাতে মানববন্ধন করেন মেইতেই গোষ্ঠীর মহিলারা। রাজ্য ও কেন্দ্র, দুই সরকারের বিরুদ্ধেই ক্ষোভ উগরে দেন তাঁরা। বিক্ষোভকারীদের দাবি, “আমরা প্রধানমন্ত্রীর ‘মন কী বাত’ শুনতে চাই না, আমরা ‘মণিপুর কী বাত’ শুনতে চাই। এইসব ভাষণ না দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আমাদের মণিপুরের এই সমস্যার সমাধান নিয়ে কথা বলা উচিত।”
প্রধানমন্ত্রীর এই নীরবতা নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধীরাও। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ইবোবি সিং-এর নেতৃত্বাধীন একটি দল শনিবারই এ নিয়ে কথা বলতে দিল্লিতে এসে পৌঁছেছেন। প্রধানমন্ত্রীকে তাঁরা অশান্ত মণিপুরে শান্তি ফেরানোর অনুরোধ করেন। অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রীর এমন ব্যবহারের তীব্র সমালোচনা করেছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। নমোর উদ্দেশ্যে তাঁর বক্তব্য, “মণিপুর নিয়ে আপনি মৌন থাকলেন। কেন? আপনার ‘মন কী বাত’ এ অবশ্যই মণিপুরের সমস্যার কথা থাকা উচিত ছিল।”
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন