দেশে স্বনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে ও কৃষির বিকাশে রাষ্ট্রায়ত্ত উদ্যোগে সার উৎপাদন কারখানা গড়ে তোলা হয়। এবার সেরকমই আটটি রাষ্ট্রায়ত্ত লাভজনক সার কারখানা বিক্রির পথে এগোচ্ছে কেন্দ্রের মোদী সরকার। যেগুলি থেকে ২০২১ সালে মোট লাভ হয়েছে ১ হাজার ৭১ কোটি টাকা।
যে আটটি রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা বিক্রির তালিকা স্থির হয়েছে সেগুলি হলঃ
১) রাষ্ট্রীয় কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্টিলাইজার (আরসিএফ)
২) ন্যাশনাল ফার্টিলাইজার (এনএফএল)
৩) ফার্টিলাইজার কর্পোরেশন (এফসিআইএল)
৪) ব্রহ্মপুত্র ভ্যালি ফার্টিলাইজার (বিভিএফসিএল)
৫) আরাবলি জিপসাম অ্যান্ড মিনারেল (এফএজিএমআইএল)
৬) মাদ্রাজ ফার্টিলাইজার (এমএফএল)
৭) ফার্টিলাইজার কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (এফসিআইএল)
8) হিন্দুস্তান ফার্টিলাইজার কর্পোরেশন (এইচএফসিএল)
সম্প্রতি, কেন্দ্রের নীতি আয়োগের কোর কমিটির বৈঠকে আটটি সার কারখানা বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেই সূত্রের খবর। বৈঠকে নীতি আয়োগের শীর্ষ আধিকারিক ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্র দপ্তর, অর্থনৈতিক সহায়ক দপ্তর ও সার দপ্তরের আধিকারিকরা।
ইতিমধ্যেই, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বাজেট অধিবেশনে জানিয়েছেন, স্ট্র্যাটেজিক ক্ষেত্র ছাড়া আর সব রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাই বেচে দেওয়া হবে। এমনকি কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, কোনটা স্ট্র্যাটেজিক ক্ষেত্র বলে বিবেচিত হবে তা ঠিক করবে নীতি আয়োগ কমিটি। অর্থমন্ত্রীর নির্দেশ কার্যকর করতেই এবার রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানাকে স্ট্র্যাটেজিক ক্ষেত্রের বাইরে রেখে বেসরকারিকরণের তালিকা তৈরি করল নীতি আয়োগ কমিটি। তবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভায় এই বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্ত এখনও চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
সূত্রের খবর, এই কারখানাগুলির শেয়ার বিক্রি আগে থেকেই শুরু হয়েছে। বর্তমানে আরসিএফ সার কারখানায় সরকারের শেয়ার ৭৫ শতাংশ, এনএফএল সংস্থায় তা ৭৪.১ শতাংশ, এফএসিটি-তে ৯০ শতাংশ, মাদ্রাজ ফার্টিলাইজারে সরকারি সরকারি শেয়ারের অংশ ৮৫.২৭ শতাংশ।
তবে, নীতি আয়োগ কমিটি সার কারখানা বেসরকারিকরণের পথে এগোলেও তাতে আপত্তি জানিয়েছে সারমন্ত্রক। যার ফলে এই বিষয়ে বহুবার তাঁদের মতামত জানতে চাইলেও কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
অন্যদিকে, রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা বেসরকারিকরণের তীব্র বিরোধিতা করেছে সিআইটিইউ। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, আরএসএস এবং মোদী সরকার 'এক দেশ এক সার' নীতি চালু করতে এবার সমস্ত রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা বেসরকারি হাতে তুলে দিচ্ছে। একধাপে মোট আটটি রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা বেচে দেওয়া হচ্ছে। এতে সারের বাজার একচেটিয়া বেসরকারি সংস্থার হাতে চলে যাবে। ফলে সারের দাম, কৃষি উৎপাদনের খরচ এবং ফসলের দাম বাড়বে।
সারা ভারত কিষাণসভা, সিআইটিইউ এবং সারা ভারত ক্ষেতমজুর ইউনিয়ন এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে - দিল্লির তালকাটোরা স্টেডিয়ামে জাতীয় কনভেনশনে বেসরকারিকরণ রুখতে আন্দোলনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ নিয়ে দেশজোড়া প্রচার অভিযান চলবে। আগামী বাজেট অধিবেশনের দিন দিল্লিতে কৃষক-শ্রমিক-ক্ষেতমজুরদের সমাবেশের অনুষ্ঠিত হবে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন