বিরোধীদের নিশানার মাঝেই মণিপুরের বিজেপি বিধায়কও রাজ্যের অশান্তি ও হিংসার পরিস্থিতিতে বীরেন সিং সরকারের মদতের অভিযোগ তুলে সরব হলেন। চূড়াচাঁদপুরের সাইকত কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক পাওলিয়েনলাল হাওকিপ এক সর্বভারতীয় সংবাদপত্রে লেখা নিবন্ধে এই অভিযোগ তুলেছেন।
হাওকিপ জানিয়েছেন, “রাজ্যের এই জাতিগত প্রতিহিংসায় সরকারের মদত রয়েছে। সেই জন্যই অশান্তি শুরুর এতদিন পেরিয়ে যাওয়ার পরেও রাজ্যে শান্তি ফেরানো সম্ভব হচ্ছে না।” তবে বীরেন সিং সরকারের উপর ‘পক্ষপাতিত্ব’-এর অভিযোগ তুললেও মণিপুরে শান্তি ফেরানোর চেষ্টায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপর সম্পূর্ণ আস্থা রেখেছেন হাওকিপ।
গত আড়াই মাসেরও বেশি সময় ধরে কুকি ও মেইতেই জাতির মধ্যে বিবাদের জেরে হিংসায় জ্বলছে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য মণিপুর। গত ৩ মে মেইতেই জনগোষ্ঠীদের তফশিলি উপজাতির তকমা দেওয়া নিয়ে মণিপুর হাইকোর্টের নির্দেশের পরেই পথে নামে কুকি-সহ মণিপুরের অন্যান্য বিভিন্ন জনজাতি। সেই থেকেই রাজ্যে অশান্তির সূত্রপাত।
মণিপুরে চলা অবিরাম হিংসায় এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৬০ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং ঘরছাড়া ৩০ হাজারেরও বেশি। রাজ্যে হিংসার পরিস্থিতিতে লাগাম টেনে আইনশৃঙ্খলা বজায় রেখে শান্তি ফেরাতে ব্যর্থ বলে মণিপুরের বিজেপি সরকারকে বিরোধীরা এই সময়ে ক্রমাগত কটাক্ষ করেছে। মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের পদত্যাগ চেয়ে রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার দাবিও করেছে বিরোধীরা। এবার সেই ঘটনায় বীরেন সিং সরকারের নিন্দায় সরব হলেন বিজেপি বিধায়ক পাওলিয়েনলাল হাওকিপ।
হাওকিপ জানিয়েছেন, “জাতিগত ও সম্প্রদায়গত হিংসা দিয়ে যে ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল, সেই ঘটনাকে মুখ্যমন্ত্রী মাদক চোরাচালানকারীদের বিরুদ্ধে সরকারের যুদ্ধ বলে দাবি করেছেন। সরকার যে এর সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত, এটাই তার প্রমাণ। একটি পক্ষপাতদুষ্ট সরকার যেকোনো জায়গাতেই শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।”
পাশাপাশি, সরকার চাইলেই এই হিংসা এড়ানো যেত বলে বলেও দাবি করেছেন হাওকিপ। প্রসঙ্গত, কুকি জনগোষ্ঠীর একাংশ মাদক চাষ ও চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত বলে চলতি বছরের শুরুতে একটি বিশেষ অভিযান চালায় বীরেন সিং সরকার। কুকিদের তরফেও মণিপুরের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে বিভিন্নভাবে তাঁদের ‘টার্গেট’ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বিধায়ক হাওকিপও জাতিগতভাবে কুকি সম্প্রদায়ের অন্তর্গত। মে মাসে ১০ জন বিধায়ক-সহ (যাদের মধ্যে ৭ জন বিজেপি বিধায়ক) হাওকিপ মুখ্যমন্ত্রী বীরেনকে চিঠি লিখে কুকি অধ্যুষিত এলাকাগুলির জন্য আলাদা স্বতন্ত্র প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার অনুরোধ জানান। কিন্তু বীরেন সিং সেই অনুরোধ খারিজ করে দিয়ে জানান, মণিপুরের অখণ্ডতাকে রক্ষা করা হবে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন