উত্তরপ্রদেশে আর ‘বুলডোজার রাজ’ চায় না দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ। গত রবিবার, প্রয়াগরাজে বুলডোজার দিয়ে যেভাবে মহম্মদ জাভেদের বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়েছে, তাকে সমর্থন জানাচ্ছেন না অনেকেই।
যৌথভাবে সংবাদ সংস্থা আইএএনএস (IANS) এবং সি-ভোটার (CVoter)-এর করা সমীক্ষায় জানা যাচ্ছে, মোট উত্তরদাতাদের মধ্যে ৫৬ শতাংশ মানুষ, উত্তরপ্রদেশে বুলডোজার দিয়ে বাড়ি ভাঙা বেআইনি বলে মনে করেছেন। অন্যদিকে, ৪৪ শতাংশ মানুষ উত্তরপ্রদেশে বুলডোজার চালানোর পক্ষে মত দিয়েছে।
সামগ্রিক ভাবে, উত্তরপ্রদেশে বুলডোজার রাজ বন্ধের পক্ষে মত দিয়েছেন বিজেপি বিরোধীদের মধ্যে ৬২ শতাংশ মানুষ। আর NDA সমর্থকদের প্রায় ৪৮ শতাংশ একই মত দিয়েছেন।
১৮ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে বয়স, এমন ৬৫ শতাংশ ‘ধ্বংস বন্ধ করুন’ দাবিকে সমর্থন করেছে। আর ৫৫ বছরের উপরের বয়স, এমন ৪১ শতাংশ মানুষ যোগী সরকারের পদক্ষেপকে সমর্থন করছে না।
২০২২ সালে উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনী প্রচারে যোগী আদিত্যনাথকে ‘বুলডোজার বাবা’ আখ্যায়িত করেন বিরোধীরা। তারপর থেকে যোগী সকলের কাছে ‘বুলডোজার বাবা’ নামেই পরিচিত হয়ে আসছেন।
সম্প্রতি, সাসপেন্ডেড বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে সংঘর্ষ ছড়ায় উত্তরপ্রদেশের কানপুরে। তার রেশ ছড়িয়ে পড়ে প্রয়াগরাজে। সংঘর্ষে নাম জড়ায় আন্দোলনকারী মহম্মদ জাভেদের। অন্যান্যদের সঙ্গে জাভেদকে আটক করে পুলিশ এবং বুলডোজার দিয়ে তাঁর বাড়ি গুড়িয়ে দেয় যোগী প্রশাসন। এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে দেশজুড়ে।
এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন এলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি গোবিন্দ মাথুর। গত মঙ্গলবার তিনি জানান, বুলডোজার দিয়ে বাড়ি ভাঙা বেআইনি। তাঁর মতে, ‘উত্তরপ্রদেশে আইনের শাসন ঠিক মতো পালন করা হচ্ছে না। এইভাবে একজনের বাড়ি কখোনই ভেঙে ফেলা উচিৎ নয়।’
সরাসরি সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ দাবি করে প্রধান বিচারপতি এন ভি রমনাকে চিঠি দিয়েছেন শীর্ষ আদালতের প্রাক্তন তিন বিচারপতি। তাতে সাক্ষর করেছেন দিল্লি, মাদ্রাজ এবং কর্ণাটক হাইকোর্টের ৩ বিচারপতি এবং ৬ জন প্রবীন আইনজীবী।
চিঠিতে তাঁরা লিখেছেন, 'বিজেপি নেতানেত্রীর মন্তব্যের প্রতিবাদ জানানোর প্রতিক্রিয়ায় রাজ্যের মুসলিমদের উপর হিংসা এবং নিপীড়ন চালাচ্ছে যোগী সরকার। নাগরিকদের রক্ষা করা দেশের শীর্ষ আদালতের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। যেভাবে নাগরিক অধিকার রক্ষায় স্পাইওয়্যার বা লকডাউনের সময়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফিরতে গিয়ে চরম দুর্দশার মধ্যে পড়া নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করে শুনানি করেছিল শীর্ষ আদালত, এ ক্ষেত্রেও তেমন পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। বুলডোজার দিয়ে যেভাবে মুসলিমদের বিরুদ্ধে দমনের রাস্তায় হাঁটছে যোগী সরকার তা সংবিধান ও বিচারব্যবস্থা নিয়ে উপহাস ছাড়া কিছু নয়।'
গত মঙ্গলবার, বিচারপতিদের এই মন্তব্যের পর এবার জনগণের ভাবনা সামনে আসছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, বুলডোজার দিয়ে বাড়ি ভাঙা-কে বেআইনি বলে মনে করছেন দেশের বেশিরভাগ মানুষ।
- with IANS inputs
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন