পুলিৎজার পুরস্কার গ্রহণ করার জন্য বিমানে দিল্লি থেকে নিউইয়র্ক যেতে চেয়েছিলেন জম্মু-কাশ্মীরের চিত্র-সাংবাদিক সান্না ইরশাদ মাট্টু (Sanna Irshad Mattoo)। অভিযোগ, বৈধ ভিসা থাকা সত্ত্বেও তাঁকে যেতে দেয়নি মোদী সরকার। মঙ্গলবার রাতে, দিল্লি বিমানবন্দরে তাঁর যাত্রা রুখে দিয়েছেন কেন্দ্রের অভিবাসন দপ্তরের আধিকারিকরা (Immigration Officials)।
টুইটারে নিজেই এই তথ্য জানিয়েছেন পুলিৎজার জয়ী চিত্র-সাংবাদিক মাট্টু। তিনি লিখেছেন, ‘পুলিৎজার পুরষ্কার গ্রহণ করার জন্য নিউইয়র্কে যাচ্ছিলাম আমি। কিন্তু, দিল্লি বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন দফতর আমাকে আটকে দিয়েছে। বৈধ মার্কিন ভিসা এবং টিকিট থাকা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক ভ্রমণে বাধা দেওয়া হয়েছে।’
এই নিয়ে দ্বিতীয়বার একই ঘটনার সাক্ষী হলেন ২৮ বছর এই চিত্র-সাংবাদিক। তিনি জানান, ‘কোনও কারণ বা কারণ দর্শানো ছাড়াই একই ঘটনা ঘটল।’
এর আগে, গত ২ জুলাই, ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে একটি বই প্রকাশ ও চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার পথে সান্না মাট্টুকে আটকানো হয়েছিল। ২০২০ সালের সেরেন্ডিপিটি আর্লস (Serendipity Arles) গ্র্যান্ট বিজয়ী হিসাবে এই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি।
সেই বিষয়টি উল্লেখ করে টুইটারে মাট্টু লিখেছেন, ‘কয়েক মাস আগের ঘটনার পর একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম আমি। কিন্তু, তাঁদের কোনও প্রতিক্রিয়া পাইনি। এই পুরষ্কার গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারাটা আমার জীবনে once-in-a-lifetime সুযোগ ছিল।’
এদিকে, সান্না মাট্টুর বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপকে ‘লজ্জাজনক’ বলে অভিহিত করেছেন গ্লোবাল প্রেস ফ্রিডম অ্যাডভোকেট - ‘দ্য কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট’ (CPJ)-এর সভাপতি জোডি গিন্সবার্গ (Jodie Ginsberg)।
মোদী সরকারের এই পদক্ষেপ নিয়ে টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘পুরষ্কার বিজয়ী সাংবাদিক সান্না মাট্টু-কে দ্বিতীয়বারের জন্য ভারত ছাড়তে বাধা দেওয়া হয়েছে। এর জন্য তাঁকে কোনো কারণ জানানো হয়নি। সান্না এবং তাঁর সহকর্মীরা ভারতে COVID-19 নিয়ে ‘শক্তিশালী চিত্র’ (powerful images)-র তোলার জন্য পুলিৎজার পুরষ্কার নিতে যাচ্ছিলেন। (তাঁকে আটকানো) ‘লজ্জাজনক’।’
শ্রীনগরের বাসিন্দা সান্না আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা ‘রয়টার্স’-এর চিত্র সাংবাদিক। ২০২২ সালের মে মাসে পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। ভারতে মহামারী করোনাকালের ভয়াবহ চিত্র তুলে রয়টার্সের যে টিম আন্তর্জাতিক মহলে সাড়া ফেলেছিল, সেই টিমে ছিলেন কাশ্মীরি কন্যা সান্না। এছাড়া ছিলেন প্রয়াত সাংবাদিক দানিশ সিদ্দিকী, অমিত দাভে এবং আদনান আবিদি।
তবে বিদেশ যাওয়ার পথে আটকানোর তালিকায় সান্নাই প্রথম নাম নয়। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে কাশ্মীরী সাংবাদিক গোহর গিলানিকেও (Gowhar Geelani) দিল্লি বিমানবন্দরে অভিবাসন কর্মীরা আটকে দিয়েছিলেন। সেসময় জার্মানি যাওয়ার কথা ছিল তাঁর।
গতবছর একটি মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে যাওয়ার পথে একই অভিজ্ঞতা হয় প্রাক্তন সাংবাদিক ও শিক্ষাবিদ জাহিদ রফিকের (Zahid Rafiq)। বিদেশ যাত্রার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়েছেন উপতক্যার সাংবাদিক রুওয়া শাহও (Ruwa Shah)।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন