একদিকে ফ্রান্স, অন্যদিকে ব্রাজিল। এই দুইয়ের মাঝে পড়ে কার্যত চাপে মোদি সরকার। এমনিতেই করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার প্রথম ধাপে যখন গোটা দেশে অক্সিজেনের হাহাকার, স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ভেঙে পড়ার অবস্থা প্রকট হয়, তখন মোদি সরকারের সমালোচনায় সরব হয়েছিল গোটা বিশ্ব। এক কথায়, মোদি সরকারের মুখ পুড়েছিল। এবার ফের বিশ্বের কাছে চাপে পড়ল কেন্দ্র। ফ্রান্সে নতুন করে মাথাচাড়া দেওয়া রাফাল-বিতর্ক। অন্যদিকে, ব্রাজিলে কোভ্যাক্সিন কেনার চুক্তি ঘিরে দুর্নীতির- চাপে মোদি সরকার। সরব হয়েছে কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলির।
ফরাসি সংস্থা দাসাউ অ্যাভিয়েশনের তৈরি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার বিষয়ে মোদির চুক্তি নিয়ে ফ্রান্সে বিচার বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। ব্রাজিলে আবার ভারত বায়োটেক আইসিএমআরের কোভিড-প্রতিষেধক কোভ্যাক্সিন কেনার চুক্তি নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে সে দেশের সুপ্রিম কোর্ট। কোনও বিষয়েই মুখ খোলেনি বিজেপি। কিন্তু আসন্ন অধিবেশনে এ বিষয়ে সংসদে ঝড় উঠতে পারে বলে মনে করছে বিজেপি।
কংগ্রেসের প্রশ্ন, মোদি সরকার নীরব কেন? এই তদন্তে বিজেপি ঢাল করছে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে। এখানেও তৈরি হয়েছে বিতর্ক। সর্বোচ্চ আদালতে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের বেঞ্চ রাফাল-চুক্তিতে তদন্তের নির্দেশ দেয়নি। পরে সেই গগৈকেই রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে মনোনীত করা হয়।
মোদী সরকারের আমলে ৩৬টি রাফাল কিনতে ৫৯ হাজার কোটি টাকার চুক্তিতে দুর্নীতি ও ঘুষের অভিযোগে ফ্রান্সে তদন্ত শুরু হয়েছে। ব্রাজিলে ২ কোটি ডোজ কোভ্যাক্সিন কেনার চুক্তিতে আর্থিক লেনদেনের আগেই দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
ভারত বায়োটেকের দাবি, নিয়ম মেনেই চুক্তি হয়। কিন্তু জবাব চায় কংগ্রেস। মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনতের বক্তব্য, ‘শুধু বেসরকারি সংস্থা ভারত বায়োটেক নয়, সরকারি প্রতিষ্ঠান আইসিএমআর-ও টিকা (কোভ্যাক্সিন) তৈরিতে অর্থ ঢেলেছে। ফলে করদাতাদের টাকা এখানে জড়িত। তা কাজে লাগিয়ে মুনাফা লোটা হচ্ছে কি না, তার তদন্ত দরকার। সরকারকেও মুখ খুলতে হবে।'
রাফাল নিয়ে কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রশ্ন তুলেছেন, ‘ফ্রান্সে তদন্ত হচ্ছে। কিন্তু ভারতে রাফাল কেনার জন্য করদাতাদের টাকা খরচ হয়েছে। তা হলে এ দেশে কেন তদন্ত হবে না?’ নিজের বন্ধুদের ফায়দা লোটার ব্যবস্থা করে দিয়েছে মোদি সরকার। রাফাল-চুক্তিতে শিল্পপতি অনিল অম্বানীর সংস্থাকে বরাত পাইয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ বিরোধীদের। ইতিমধ্যেই বিরোধীরা রাফালে দুর্নীতি নিয়ে সংসদীয় তদন্তের দাবি করেছেন।
প্রসঙ্গত, ফ্রান্সের সরকারি তদন্তকারী সংস্থা পিএনএফ’র অর্থনৈতিক অপরাধ শাখা জানিয়েছে, রাফালে চুক্তিতে দুর্নীতি, প্রভাব খাটানো, বেআইনি অর্থ লেনদেন, পক্ষপাতমূলক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বিচারবিভাগীয় তদন্ত শুরু করেছে তারা।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন