Raghuram Rajan: বেকারত্ব বৃদ্ধির সুযোগ নিয়ে বিভাজনের রাজনীতি করেন নেতারা, মন্তব্য রঘুরাম রাজনের

এক সাক্ষাৎকারে রাজন বলেন, 'যদি ভারতে বেকারত্বের হার বাড়ে, এটি থেকে সুবিধা নিতে পারে 'উদ্যোগী' রাজনীতিবিদরা। কর্মসংস্থানের মতো প্রকৃত সমস্যা থেকে মুখ ঘুরিয়ে ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতি করবে তাঁরা।'
রঘুরাম রাজন
রঘুরাম রাজন ফাইল ছবি, গ্রাফিক্স - সুমিত্রা নন্দন
Published on

দেশে বেকারত্বের হার, কর্মসংস্থান এবং বিভাজনের রাজনীতি নিয়ে মুখ খুলেছেন অর্থনীতিবিদ তথা ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের (RBI) প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন (Raghuram Rajan)।

‘প্রো মার্কেট’ (ProMarket) নামে এক সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, 'যদি ভারতে বেকারত্বের হার বাড়ে, এটি থেকে সুবিধা নিতে পারে 'উদ্যোগী' রাজনীতিবিদরা। কর্মসংস্থানের মতো প্রকৃত সমস্যা থেকে মুখ ঘুরিয়ে ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতি করবে তাঁরা।' একইসঙ্গে তিনি জানান, 'বেকারত্বের হার বৃদ্ধিই এখন দেশের সবচেয়ে বড় বিপদ।'

দেশজুড়ে বুলডোজার রাজ, জ্ঞানব্যাপী মসজিদ, হজরত মহম্মদকে নিয়ে বিজেপি নেতানেত্রীদের বিতর্কিত মন্তব্য এবং তা ঘিরে উত্তাল পরিস্থিতির মাঝে এমনই সতর্কতামূলক মন্তব্য করেছেন প্রবীণ অর্থনীতিবিদ রঘুরাম রাজন।

  • কী জানিয়েছেন তিনি?

ভারতের শীর্ষ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর জানিয়েছেন, 'বেকারত্বের হার বেশি থাকলে, নিম্ন মধ্যবিত্তের জন্য আরও বৈষম্য এবং বিভাজন তৈরি হয়। এই সুযোগ কাজে লাগায় ‘উদ্যমী’ রাজনীতিবিদরা। তাঁরা বিভাজনের রাজনীতি করে। তাঁরা হয়তো সেই কারণেই বলে ‘আসুন আমরা এই অতীতের হিন্দু মন্দিরগুলি পুনরুদ্ধারের দিকে মনোনিবেশ করি যেখানে এখন মসজিদ রয়েছে’। এটা তাঁরা করেন কর্মসংস্থান বৃদ্ধির দিকটি এড়িয়ে যাওয়ার জন্যই।'

তাহলে কী করা দরকার ?

শুধু সমস্যা তুলে ধরা নয়, তা সমাধানেরও কথা জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ রাজন। তাঁর মতে, 'ভারতের একটি শক্তিশালী, টেঁকসই এবং ন্যায়সঙ্গত বৃদ্ধির (অর্থনৈতিক) পরিকল্পনা দরকার। যে পরিকল্পনা, নারী ও মুসলিম-সহ সমস্ত সংখ্যালঘুদের একত্রিত করে তাদের আর্থিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।'

মহামারীকালে ভারতের অবস্থা

অনেকেই মনে করেন, করোনা মহামারীকালে দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। তার জেরেই নতুন করে কর্মসংস্থানের দিকে নজর দিতে পারেনি সরকার। তবে এই যুক্তি মানতে নারাজ রঘুরাম রাজন। তাঁর মতে, 'শুধুমাত্র দেশের আর্থিক বৃদ্ধির দিকে নজর দিলে দেখা যাবে মহামারীর চাপ সামলে দেশের অর্থনীতি বিপজ্জনক অবস্থায় পৌঁছয়নি। কিন্তু দেশের কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের অংশগ্রহণের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে, এমনকী পরিস্থিতি সৌদি আরবের চেয়েও খারাপ।’

লঙ্কা সংকট

একইসঙ্গে RBI-এর প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন জানান, 'যখন তিনি আরবিআই-এর গভর্নর ছিলেন, সে সময় শ্রীলঙ্কাকে জরুরী ঋণ প্রদান করেছিল ভারত।' তাঁর দাবি, 'এ সময় কিন্তু শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি ততটা ভয়ঙ্কর ছিল না। এটি ছিল একটি অভাবী বন্ধু সাহায্য করার প্রচেষ্টা।'

১৯৮৭ সালের পর আবার সঙ্কটে পড়েছে ভারতের প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কা। সেখানে বেকারত্বের হার চরমে উঠেছে। বিগত এক দশক ধরে শ্রীলঙ্কার সরকার দেশের অর্থনৈতিক শ্রীবৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের প্রতি নজর দেয়নি। উল্টে, ধর্মীয় উন্মাদনা এবং জনগণের মধ্যে বিভাজনের পথে হেঁটেছে। এর ফলেই সে দেশের অর্থ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।

এই প্রসঙ্গ টেনে ক’দিন আগে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi) মন্তব্য করেছিলেন, 'অদূর ভবিষ্যতে ভারতের হাল তীব্র অর্থসংকটে পড়া শ্রীলঙ্কার মতোই হতে চলেছে।'

তবে সেই পরিস্থিতি এখনও তৈরি না হলেও ভারতীয় অর্থনীতির রক্তক্ষরণ অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মুদ্রাস্ফীতি। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বেকারত্বের হার। সোমবারই টাকার দামে সর্বকালীন পতন ঘটেছে। মার্কিন ডলারের (US) তুলনায় টাকার দাম দাঁড়িয়েছে ৭৮ টাকা ১৫ পয়সা। বড় ধাক্কা লেগেছে শেয়ার বাজারেও। বাজার খুলতেই এক ধাক্কায় ১,৪০০ পয়েন্ট পড়ে সেনসেক্স নেমে যায় ৫৩,১৮৪.৬১ পয়েন্টে। যেখানে গত শুক্রবার বাজার বন্ধের সময় সেনসেক্স ছিলো ৫৪,৩০৩.৪৪ পয়েন্টে।

আর এই পরিস্থিতি থেকে নজর ঘোরাতে মন্দির-মসজিদ রাজনীতি করার সুযোগ নিচ্ছেন রাজনৈতিক নেতারা। সেকথা আবার স্পষ্ট জানিয়েছেন রঘুরাম রাজন।

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in