ভারতীয় রেলের সুরক্ষা (Safety Category) বিভাগে ১০ লক্ষ অনুমোদিত পদ থাকলেও সেখানে দেড় লক্ষের বেশি পদ শূন্য। এই তথ্য মার্চ ২০২৪-এর। মধ্যপ্রদেশের চন্দ্রশেখর গৌর-এর করা এক আরটিআই-এর উত্তরে রেল মন্ত্রকের পক্ষ থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
সুরক্ষা বিভাগের পদের মধ্যে ট্রেন চালক, ইন্সপেক্টর, ক্রু কন্ট্রোলার, লোকো ইন্সট্রাক্ট্রর, ট্রেন কন্ট্রোলার, ট্র্যাক মেইনটেনারস, স্টেশন মাষ্টার, পয়েন্টসম্যান, ইলেক্ট্রিক সিগন্যাল মেইনটেনারস এবং সিগন্যালিং সুপারভাইজার পদগুলি পড়ে। বিশেষ করে নিরাপদ ট্রেন যাত্রার জন্য এই পদগুলি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
আরটিআই-এর উত্তরে মন্ত্রক জানিয়েছে, ভারতীয় রেলের সুরক্ষা বিভাগে মোট অনুমোদিত পদ, কর্মরতের সংখ্যা এবং শূন্যপদ যথাক্রমে ১০ লক্ষ ৯৪১, ৮ লক্ষ ৪৮ হাজার ২০৭ এবং ১ লক্ষ ৫২ হাজার ৭৩৪।
লোকো পাইলটের ক্ষেত্রে (মেল/এক্সপ্রেস/প্যাসেঞ্জার/গুডস/শান্টিং) শূন্যপদ কত? আরটিআই-এ করা এই প্রশ্নের উত্তরে রেল মন্ত্রক জানিয়েছে, এক্ষেত্রে মোট অনুমোদিত পদ ৭০,০৯৩ এবং শূন্যপদের সংখ্যা ১৪,৪২৯।
আরটিআই আবেদনকারী চন্দ্র শেখর গৌর জানিয়েছেন, রেলে সহকারী চালকের বহু পদও এখন শূন্য আছে। যেখানে মোট অনুমোদিত ৫৭,৫৫১টি পদের মধ্যে শূন্য আছে ৪,৩৩৭টি পদ।
এই আরটিআই-তে আবেদনকারী জানতে চেয়েছিলেন, বিগত চার বছরে রেল কতগুলি নতুন পদ সৃষ্টি করেছে এবং কতগুলি পদ প্রত্যাহার করে নিয়েছে। যার উত্তরে রেল মন্ত্রক জানিয়েছে, এই তথ্য কেন্দ্রীয়ভাবে রাখা হয়না। এই তথ্য রেলের বিভিন্ন জোনাল দপ্তরের কাছ থেকে পাওয়া যেতে পারে।
গৌর আরও জানান, “মন্ত্রক আমাকে পরামর্শ দিয়েছে যে এই ধরনের তথ্য সংশ্লিষ্ট সরকারী কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে RTI আইনের অধীনে আলাদা করে আবেদন জমা দিয়ে পাওয়া যেতে পারে। যদিও আমি মনে করি এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য কেন্দ্রীয়ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা উচিত।”
গত ৪ জুন ন্যাশনাল হেরাল্ডে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, রেলে মোট ৩ লক্ষ ১২ হাজার নন গেজেটেড পদ শূন্য পড়ে রয়েছে। ওই প্রতিবেদন অনুসারে, এই তথ্য ২৩ ডিসেম্বর ২০২২-এর। যার মধ্যে সিগন্যাল এবং টেলিকমিউনিকেশন বিভাগে দেশ জুড়ে শূন্য পদের সংখ্যা ৭৭,০৭৯। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব রাজ্যসভায় বিভিন্ন সময়ে প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছেন, সিগন্যালিং এবং টেলিকমিউনিকেশন বিভাগে ১৪,৮১৫টি পদ খালি আছে এবং ট্রাফিক ট্রান্সপোর্টেশন বিভাগে শূন্যপদের সংখ্যা ৬২,২৬৪। এছাড়াও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে দেশ জুড়ে শূন্যপদের সংখ্যা ৮৭,৬৫৪, মেকানিক্যাল বিভাগে ৬৪,৩৪৬ এবং ইলেক্ট্রিকাল বিভাগে ৩৮,০৯৬।
এই প্রসঙ্গে ন্যাশনাল ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান রেলওয়েমেন-এর পক্ষ থেকে সংগঠনের সম্পাদক অশোক শর্মা জানিয়েছেন, এই কারণেই রেলে এত দুর্ঘটনা ঘটছে। সুরক্ষা বিভাগের কর্মীদের বেশি চাপ নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। অধিকাংশ সময়ে তাঁরা তাঁদের শারীরিক এবং মানসিক সক্ষমতাকে অতিক্রম করে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
শর্মা আরও দাবি করেন যে, রেল মন্ত্রক দু’বছর আগে থেকেই সুরক্ষা বিভাগে নতুন পদ সৃষ্টি বন্ধ করে দিয়েছে, যা সবথেকে বড়ো সমস্যা তৈরি করেছে। বর্তমানে অর্থ মন্ত্রকের অনুমতি ছাড়া এই পদ আর তৈরি করা যাবেনা।
রেলওয়ে ট্রেড ইউনিয়নগুলির পক্ষ থেকেও কর্মী সংখ্যা কম হবার কারণে নিরাপত্তা বিভাগে কর্মকর্তা এবং কর্মীদের উপর ক্রমবর্ধমান চাপের বিষয়টি উল্লেখ করেছে।
রেলওয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ট্রেন চলাচলের ক্ষেত্রে নিরাপত্তাকেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয় এবং রেলওয়ে গত ১০ বছরে এই বিষয়ে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করেছে এবং অনেক কাঠামোগত এবং পদ্ধতিগত উন্নতিও করেছে যা নিরাপদ ট্রেন চলাচলে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
- With Agency Inputs
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন