ঋণ মেটাতে ‘নিলামে তোলা হচ্ছে মেয়েদের’। আর, এই নিলামকে আইনি বৈধতা দিতে ব্যবহার করা হচ্ছে স্ট্যাম্প পেপার। শুধু তাই নয়, এই ‘প্রক্রিয়া’য় বাধা দিলে ‘ধর্ষণ’ করা হচ্ছে মেয়ের মায়েদের। আর পুরোটাই হচ্ছে খাপ পঞ্চায়েতের নির্দেশে। কংগ্রেস শাসিত রাজস্থানে (Rajasthan) এই ধরণের অভিযোগ ওঠায় নড়েচড়ে বসেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (National Human Rights Commission)।
জানা যাচ্ছে, মহিলাদের নিলাম এবং ধর্ষণের বিষয়ে রাজস্থান সরকারের থেকে রিপোর্ট তলব করেছে মানবাধিকার কমিশন। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে মুখ্যসচিব (Chief Secretary) এবং রাজ্য পুলিশের ডিজিকে পৃথক রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা জানিয়েছে কমিশন।
কমিশনের জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘দুই পক্ষের মধ্যে লেনদেন বা ঋণ পরিশোধ সংক্রান্ত কোনও সমস্যা দেখা দিলেই সেই টাকা উদ্ধারের জন্য নিলামে তোলা হচ্ছে ৮ থেকে ১৮ বছর বয়সি মেয়েদের। এই সব মেয়েদের পাঠানো হচ্ছে উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, মুম্বই, দিল্লি এমনকী বিদেশেও। তাদের সঙ্গে ক্রীতদাসীর মতো আচরণ করে শারীরিক হেনস্তা, অত্যাচার ও যৌন নিপীড়ন করা হচ্ছে।’
বিবৃতিতে কমিশন জানিয়েছে, ‘যদি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট সত্যি হয়, তাহলে এটা স্পষ্ট- রাজস্থানে ব্যাপক ভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।’
এরপরেই ঘটনার সত্যতা জানানোর জন্য মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এই ধরণের ঘটনা কীভাবে ঘটেছে, কারা কারা যুক্ত এই কাণ্ডে, সেই সমস্ত তথ্যের পাশাপাশি কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানাতে হবে মুখ্যসচিবকে।’
এছাড়া, সংবিধান অনুযায়ী পঞ্চায়তি রাজ প্রতিষ্ঠা করে খাপ পঞ্চায়েত বিলুপ্ত করার ক্ষেত্রে সরকার কী পদক্ষেপ করেছে, তাও জানতে চেয়েছে মানবাধিকার কমিশন।
শুধু তাই নয়, এই ধরনের ঘটনায় যুক্ত অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশ কী পদক্ষেপ করেছে, তাও জানাতে বলা হয়েছে রাজস্থানের ডিজিপিকে। এই সংক্রান্ত মামলার বিশদ তথ্য দিতে বলা হয়েছে পুলিশকে।
জানা যাচ্ছে, রাজস্থানের বহু জেলাতেই ঋণ আদায় করতে পুলিশের বদলে খাপ পঞ্চায়েতের দ্বারস্থ হয় ঋণ প্রদানকারীরা। রিপোর্টে উল্লেখ, ঋণ মেটাতে প্রথমে এক ব্যক্তি তাঁর নিজের বোন এবং পরে নিজের ৮ বছরের মেয়েকে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিল।
অপর এক ঘটনায় জানা যায়, স্ত্রী ও মায়ের চিকিৎসার জন্য মোট ১২ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিল এক ব্যক্তি। আর, সেই ঋণ মেটাতে না পারায়, পঞ্চায়েতের নির্দেশে তার ছোট মেয়েকে বিক্রি করতে হয় ওই ব্যক্তিকে। সেই মেয়েকে আগ্রায় নিয়ে গিয়ে দু’বার বিক্রি করা হয়। এরই মধ্যে চারবার গর্ভবতী হয়ে পড়ে নাবালিকা! আর, ভয়াবহ এই ধরণের ঘটনার অভিযোগ ওঠায় সক্রিয় হয়েছে মানবাধিকার কমিশন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন