CBSE-র দশম শ্রেণির পাঠ্যবই থেকে চার্লস ডারউইনের বিবর্তনবাদের তত্ত্ব বাদ দেওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা জানিয়েছেন, পাঠ্যপুস্তক থেকে এই তত্ত্ব সরিয়ে ফেলার ফলে শিশুদের মধ্যে কুসংস্কার, অযৌক্তিক বিশ্বাসের অনুশীলন বাড়বে। আগামী দিনে এটি চরম মাত্রা নিতে পারে বলে অনুমান তাঁদের।
গত এপ্রিলে, CBSE-র দশম শ্রেণির পাঠ্যবই থেকে চার্লস ডারউইনের জৈব বিবর্তনবাদের তত্ত্ব (থিওরি অব বায়োলজিক্যাল ইভোলিউশন) সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (NCERT)। তারপর থেকে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন দেশের বিশিষ্ট বিজ্ঞানীরা।
জানা যাচ্ছে, NCERT-র এই পদক্ষেপ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের ১৮০০-র বেশি বিজ্ঞানী ও গবেষকরা। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ (TIFR), ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (IISER) এবং ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (IIT) এর মতো বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা।
একইসঙ্গে, ডারউইনের বিবর্তনবাদের প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরে খোলা চিঠি লিখেছেন তাঁরা। চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘দশম শ্রেণীর পাঠ্যক্রম থেকে ডারউইনের বিবর্তনবাদের শিক্ষা বাদ দেওয়া নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।’
ভারতে স্কুল পর্যায়ের পাঠ্যবই তৈরি হয় NCERT-র সুপারিশ মেনে। ছাত্র-ছাত্রীদের বিবর্তনবাদ সম্বন্ধে জানতে না-দেওয়াটা ‘শিক্ষার নামে প্রহসন’ বলে দাবি করে, তাঁরা জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের বৈজ্ঞানিক মানসিকতা গড়ে তোলার জন্য ডারউইনের বিবর্তনবাদ বুঝতে শেখাটা খুবই জরুরী। এই তত্ত্বটি এতটাই মৌলিক যে, এই বিবর্তনবাদের তত্ত্বের ধারণাগুলি ছাড়া কেউ প্রাকৃতিক বিজ্ঞান বুঝতে পারে না।
জওহরলাল নেহেরু সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড সায়েন্টিফিক রিসার্চ-এর অধ্যাপক অমিতাভ যোশী বলেন, ‘বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে পরিবেশগত মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমেই জীবনের অস্তিত্ব গড়ে ওঠে। আর, এটি বিবর্তনবাদ ছাড়া ব্যাখ্যা করা যায় না।’
বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেস (এনসিবিএস)-এর পরিচালক ও পুনের ভারতীয় ইনস্টিটিউট বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণা (IISER)-র অধ্যাপক এল.এস. শশীধরা জানান, ‘অ্যানাটমি বা বায়ো কেমেস্ট্রি - দুটি বিষয়ই বায়োলজি বা জীববিজ্ঞানের মধ্যে পড়ে না। অন্যদিকে, বিবর্তন (বাদ) হল এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি যা জীববিজ্ঞানের গবেষণা থেকে সংগ্রহ করা সমস্ত বাস্তব তথ্যকে বোঝায়।’
ন্যাশনাল প্রগ্রেসিভ স্কুলস কনফারেন্স (NPSC) এর চেয়ারপার্সন এবং নয়া দিল্লির দ্বারকায় ITL স্কুলের প্রিন্সিপাল সুধা আচার্য বলেন, স্কুলের পাঠ্যপুস্তক থেকে তত্ত্বটি সরিয়ে দিলে শিশুর শিক্ষায় একটি উল্লেখযোগ্য ফাঁক থাকবে।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে আচার্য বলেন, ‘শিশুরা যে বিষয়েই বিশেষ পাঠ নিতে ইচ্ছুক হোন না কেন, শিশুর বিকাশ ও জীবন দক্ষতা অর্জনের জন্য বিভিন্ন বিষয়ের মৌলিক ধারণা সম্পর্কে সচেতনতা গুরুত্বপূর্ণ।’
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন