নির্বাচনী বন্ড ছাপানোর খরচ ৯.৫ কোটি, জনগণের করের টাকায় মোদী সরকারের নয়া কীর্তি!

RTI-মারফত জানা গেছে, রাজনৈতিক দলের খরচ জোগাতে নির্বাচনী বন্ড (EB) ছাপিয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু, এই বন্ড ছাপানোর জন্য করদাতাদের ৯.৫ কোটি টাকা ব্যয় করেছে মোদী সরকার৷
ছবি প্রতীকী
ছবি প্রতীকীগ্রাফিক্স - সুমিত্রা নন্দন
Published on

জনগণের করের টাকা দেশের উন্নয়নে কাজে না লাগিয়ে, রাজনৈতিক দলের স্বার্থে ব্যবহার করছে কেন্দ্র। সম্প্রতি, তথ্য জানার অধিকার (RTI) আইনে মোদী সরকারের কর্মকাণ্ডের এমনই চিত্র সামনে এসেছে।

RTI-মারফত জানা গেছে, রাজনৈতিক দলের খরচ জোগাতে নির্বাচনী বন্ড (Election Bond) ছাপিয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু, এই বন্ড ছাপানোর জন্য করদাতাদের ৯.৫ কোটি টাকা ব্যয় করেছে মোদী সরকার৷

নিউজক্লিকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, নির্বাচনী বন্ড নিয়ে RTI করেছিলেন লোকেশ বাত্রা (Lokesh Batra) নামে এক অবসরপ্রাপ্ত নৌ সেনা অফিসার। তাঁর প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্র জানিয়েছে, গুজরাট ও হিমাচল প্রদেশে নির্বাচনের আগে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে প্রায় ১০,৭৯১.৫০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে রাজনৈতিক দলগুলি।

কেন্দ্রের অর্থ মন্ত্রক জানিয়েছে, নির্বাচনী বন্ডের ৯৩.৬৭ শতাংশ হল ১ কোটি টাকা মূল্যের। আর, রাজনৈতিক দলগুলিকে অনুদান দেওয়ার জন্য এই ১ কোটি টাকা মূল্যের নির্বাচনী বন্ডগুলি কিনেছে বড় বড় কর্পোরেট সংস্থা।

কিন্তু, এই বন্ডগুলি ছাপা, বিতরণ ও পরিষেবা প্রদানের জন্য যে খরচ হয়েছে, সেজন্য কর্পোরেটদের কাছ থেকে কোনও চার্জ আদায় করেনি মোদী সরকার। পুরোটাই খরচ করা হয়েছে জনগণের ট্যাক্সের টাকা থেকে। এজন্য চলতি বছর খরচ করা হয়েছে ৯.৫ কোটি টাকা।

যে কোনও ব্যক্তি বা সংস্থা এই বন্ডগুলি স্টেট ব্যাঙ্ক (SBI) থেকে কিনে চাঁদা হিসাবে তা রাজনৈতিক দলগুলিকে দিতে পারেন। পরে সেই বন্ডগুলি ভাঙিয়ে নিজেদের অ্যাকাউন্টে জমা করতে পারে রাজনৈতিক দলগুলি। তবে, আশ্চর্যের বিষয় এই নির্বাচনী বন্ডগুলি (চাঁদা হিসাবে) ছাপার জন্য যে খরচ হয়, শেষ পর্যন্ত তা বহন করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

মোদী সরকারের এই নির্বাচনী বন্ড প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্ট মামলা দায়ের করেছে অ্যাসোসিয়েশন অফ ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস (ADR) নামক একটি সংস্থা এবং সিপিআই(এম) ও কংগ্রেস। আগামী ৬ ডিসেম্বর, এই বিষয়ে শুনানি আছে শীর্ষ আদালতে।

২০১৮ সালে প্রথম নির্বাচনী বন্ড চালু করে মোদী সরকার। নির্বাচনী বন্ড থেকে এই বছর (লোকসভা ভোটের আগে) বিজেপির মোট আয় ছিল প্রায় ২,৩৫৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬১ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ১,৪৫০ কোটি টাকাই এসেছে নির্বাচনী বন্ড থেকে। ওই একই বছরে, কংগ্রেসের মোট আয় ছিল ৫৫১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬৯ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ৩৮৩ কোটি টাকা এসেছে নির্বাচনী বন্ড থেকে।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে মোট নির্বাচনী বন্ডের ৭৬ শতাংশই পেয়েছে শাসক বিজেপি।

২০১৯-২০ সালে ইলেক্টোরাল বন্ডের মাধ্যমে মোট ৩,৩৫৫ কোটি টাকার তহবিল সংগ্রহ করেছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। এর মধ্যে বিজেপির একার তহবিলেই গেছে ২,৫৫৫ কোটি টাকা, শতাংশের হিসেবে যা প্রায় ৭৬ শতাংশ। তার আগের বছর ইলেক্টোরাল বন্ডের মাধ্যমে বিজেপি আয় করেছিল ১,৪৫০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে ইলেক্টোরাল বন্ডের মাধ্যমে বিজেপির আয় বেড়েছে ৭৫ শতাংশ।

অপরদিকে বিজেপির প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসের আয় কমছে। ২০১৮-১৯ সালে ইলেক্টোরাল বন্ডের মাধ্যমে ৩৮৩ কোটি টাকা পেয়েছিল কংগ্রেস। ২০১৯-২০ সালে দলটি পেয়েছে ৩১৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় ১৭ শতাংশ কমেছে আয়‌।

ছবি প্রতীকী
Electoral Bond: গুজরাট নির্বাচনের আগে দশ হাজার কোটি টাকার নির্বাচনী বন্ড ছাপাল মোদী সরকার - RTI
ছবি প্রতীকী
২০১৯-২০ সালে নির্বাচনী বন্ড থেকে BJP-র আয় ২৫৫৫ কোটি টাকা, তৃতীয় স্থানে তৃণমূল: রিপোর্ট

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in