ছোট বেলায় কচি মনে সবকিছুই সহজে গেঁথে শিক্ষার্থীর মনে। আর তাতে যদি মিশিয়ে দেওয়া যায় গেরুয়া ছোঁয়া, তাহলে ‘কেল্লা ফতে’। সব শিক্ষার্থীই বেড়ে উঠবে গেরুয়া ভাবনায় ভর করে। সেই লক্ষ্যেই এবার এগিয়ে চলেছে কর্ণাটক। জানা যাচ্ছে, ২০২২-২৩ সালের শিক্ষাবর্ষে দশম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে কেশব বলিরাম হেডগেওয়ারের বক্তৃতা। যিনি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) প্রতিষ্ঠাতা।
সূত্রের খবর, লেখক রোহিত চক্রতীর্থের নেতৃত্বাধীন পাঠ্যপুস্তক পুনর্বিবেচনা কমিটি হেডগেওয়ারের বক্তৃতা পাঠ্য পাঠ্যসূচিতে যুক্ত করার সুপারিশ করেছিল। তা এবার দশম শ্রেণীর প্রথম ভাষা হিসাবে ‘কন্নড়’-এর পাঠ্যপুস্তকে জায়গা দেওয়া হয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, বিজেপি ও আরএসএসের সমালোচনা করেন বা করেছেন, এমন লেখকদের লেখাও বাদ দেওয়া হয়েছে নতুন সিলেবাসে।
কন্নড় ভাষার নয়া সিলেবাসে গদ্য বিভাগের ৫ অধ্যায়ে একটি অধ্যায় রাখা হয়েছে। শিরোনাম দেওয়া হয়েছে- ‘আপনার আসল রোল মডেল কার হওয়া উচিত?’ এই অধ্যায়েই আরএসএস-এর প্রতিষ্ঠাতা হেডগেওয়ারের বক্তৃতা যুক্ত করা হয়েছে। সেইসঙ্গে, প্রখ্যাত সাংবাদিক পি লঙ্কেশ এবং বামপন্থী চিন্তাবিদ জি. রামকৃষ্ণের লেখা সিলেবাস থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আর প্রয়াত বৈদিক পণ্ডিত ব্যানাঞ্জে গোবিন্দচার্যের লেখা 'সুকনাশনা উপাসনা' এবং সমালোচক শতবধানী আর. গণেশের লেখা 'শ্রেষ্ঠ ভারতেয়া চিন্তানেগালু' কর্ণাটকের নতুন সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এদিকে, বিজেপি শাসিত কর্ণাটক সরকারের বিরুদ্ধে শিক্ষায় গৈরিকীকরণের অভিযোগ উঠেছে। প্রখ্যাত লেখক ও কন্নড় ডেভলপমেন্ট অথরিটির প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এসজি সিদ্দারামাইয়া জানিয়েছেন, 'জাতীয় শিক্ষা নীতি-২০২০-র মূল উদ্দেশ্যই হল স্কুল শিক্ষাকে গেরুয়াকরণ করা। মূলত, জাতীয় শিক্ষা নীতির মাধ্যমে স্কুলগুলিতে আরএসএস এজেন্ডা প্রয়োগ করা হচ্ছে।‘ একইসঙ্গে, 'সচেতন নাগরিকদের' বিজেপি সরকারের এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করা এবং শিক্ষায় বৈজ্ঞানিক ও ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধকে সমর্থনের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
তবে, এসজি সিদ্দারামাইয়ার এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বি.সি. নাগেশ জানিয়েছেন, 'আদর্শের ভিত্তিতে নয়, হেডগেওয়ারের বক্তৃতা পাঠ্যক্রমে স্থান পেয়েছে পাঠ্যপুস্তক পুনর্বিবেচনা কমিটির সুপারিশেই।' যে কমিটির প্রধান রোহিত চক্রতীর্থ একদা ঘোষণা করেছিলেন, ‘মহীশূরের মুসলিম রাজা টিপু সুলতানের গৌরব কথা স্কুল পাঠ্যক্রম থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে।‘
তবে স্কুল সিলেবাস নিয়ে বিতর্ক এই প্রথম নয়। পাঠ্যপুস্তকে বিতর্কিত ধর্মীয় বিষয়ের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছিল কর্ণাটক সরকার। পরে, (২০২১ সালের ১০ মে) কর্ণাটক সরকার ঘোষণা করে প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবই থেকে বিতর্কিত ধর্মীয় বিষয় বাদ দেওয়া হবে। ষষ্ঠ শ্রেণির সমাজবিজ্ঞান প্রথম ভাগের পাঠ্য বিষয়ে বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের উত্থানের জন্য বৈদিক ধর্মকে দায়ী করা হয়েছে, এই বিষয়ে অভিযোগ ওঠার পরই নতুন সিদ্ধান্ত সরকারের। বিতর্কিত বিষয়গুলি চিহ্নিত করতে উচ্চস্তরীয় কমিটিও গড়া হবে। কিন্তু, দেখা যাচ্ছে- এক পরিবর্তনের হাত ধরে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে হাঁটছে।
- with IANS inputs
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন