সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ। স্বাধীনতা দিবসের আগে দেশের জাতীয় পতাকাকে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রোফাইল পিকচার করার বিষয়ে ঘিরে তৈরি হল বিতর্ক।
স্বাধীনতা দিবসের আগে গত ২ আগস্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের প্রোফাইল পিকচার বদল করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নিজের ছবির বদলে তিনি দেশের জাতীয় পতাকার ছবি লাগিয়েছেন প্রোফাইল পিকচারে। মূলত 'হর ঘর তিরঙ্গা' প্রচারকে সফল করতেই প্রধানমন্ত্রী সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের প্রোফাইল পিকচারের জায়গায় জাতীয় পতাকার ছবি লাগানোর আবেদন জানিয়েছিলেন।
মোদীর এই বার্তাকে সফল করতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থেকে শুরু করে সাংসদরাও প্রোফাইল পিকচার বদলে জাতীয় পতাকার ছবি রেখেছেন। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদেরও প্রোফাইল পিকচারে জাতীয় পতাকার ছবি রাখতে দেখা গেছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা থেকে শুরু করে গেরুয়া শিবিরের একাধিক নেতা-কর্মী-বিধায়কদের প্রোফাইল পিকচারে জাতীয় পতাকার ছবি রাখতে দেখা গেছে। পাশাপাশি, মঙ্গলবার সকালেই সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের প্রোফাইল পিকচার বদলেছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা, কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাই। কিন্তু ব্যতিক্রম থেকেছে আরএসএস।
কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর বার্তাকে কার্যত উড়িয়ে দিয়ে 'হর ঘর তিরঙ্গা' প্রচারে অংশ নেয়নি আরএসএস। যে কারণে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের প্রোফাইল পিকচার বদল না করায় তীব্র সমালোচনার ঝড় উঠেছে। তবে এই বিতর্কের পাল্টা হিসেবে মুখ খুলেছে আরএসএস।
এ প্রসঙ্গে আরএসএস-র সর্বভারতীয় প্রচার প্রধান সুনীল আম্বেকর সংবাদসংস্থা পিটিআই-কে জানান, "এ ধরনের বিষয় নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয়। আরএসএস ইতিমধ্যেই 'হর ঘর তিরঙ্গা' এবং 'আজাদি কা অমৃত মহোৎসব' কর্মসূচিতে তাদের পূর্ণ সমর্থনের কথা জানিয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, "সংঘ জুলাই মাসেই জানিয়েছিল, সরকারি, বেসরকারি সংস্থা এবং সংঘের সঙ্গে যুক্ত সংস্থাগুলি এই সংক্রান্ত যে যে কর্মসূচি পালন করবে তাতে সমর্থন রয়েছে। জনগণ এবং স্বয়ংসেবকদের এই কর্মসূচিতে পূর্ণ সমর্থন জানানোর জন্য এবং অংশগ্রহণের জন্যও আবেদন করেছিল সংঘ।"
কোনও নাম না নিয়েই সংঘের এক কর্মকর্তা জানান, যে রাজনৈতিক দল এই ধরণের অভিযোগ তুলেছে, তারাই দেশভাগের জন্য দায়ী। সোশ্যাল মিডিয়ায় উত্থাপিত প্রশ্ন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে এক আরএসএস কর্মকর্তা জানান, "এটা একটা প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া আমরা কীভাবে পরিচালনা এবং উদযাপন করব সেটাই ভাবছি। সংঘ ইতিমধ্যেই এ ব্যাপারে তার অবস্থান স্পষ্ট করেছে এবং 'অমৃত মহোৎসব' সংক্রান্ত কেন্দ্রের যাবতীয় কর্মসূচীকে সমর্থন করেছে।"
এর আগে নরেন্দ্র মোদী মাসিক রেডিও সম্প্রচারের 'মন কি বাত'-এ স্বাধীনতা দিবসের ৭৫তম বর্ষ উপলক্ষ্যে জনগণকে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজস্ব প্রোফাইল পিকচারে জাতীয় পতাকার ছবি রাখার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
সে সময় কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী 'হর ঘর তিরঙ্গা' কর্মসূচী নিয়ে কটাক্ষ করে বলেছিলেন, "ইতিহাস সাক্ষী, যে রাজনৈতিক দল 'হর ঘর তিরঙ্গা' কর্মসূচির ডাক দিয়েছে, তারা এমন মতাদর্শের সংগঠন থেকে উঠে এসেছে যারা দেশ বিরোধী এবং ৫২ বছর তারা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেনি।’
পাশাপাশি ট্যুইটে আরএসএস-বিজেপিকে আক্রমণ শানিয়ে রাহুল লেখেন, "স্বাধীনতার সময় কংগ্রেসকে তারা আটকাতে পারেনি, আজও কংগ্রেসকে আটকাতে পারবে না তারা।"
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন