দেশের সমস্ত সাংসদ ও বিধায়কদের নামে বিচারাধীন থাকা ফৌজদারি মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য স্বতঃপ্রণোদিত মামলা বা সুয়ো মোটো মামলা নথিভুক্ত করতে হবে। বৃহস্পতিবার দেশের প্রতিটি হাইকোর্টকে এমনই নির্দেশ দিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত। এছাড়াও এর জন্য দেশের প্রত্যেকটি হাইকোর্টকে একটি বিশেষ বেঞ্চ গঠন করারও নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি.ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ।
ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হয়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর ২ বছর বা তার বেশি দিনের জেলের সাজা পেলে সাংসদ, বিধায়ক-সহ কোনও জনপ্রতিনিধি যাতে আজীবন ভোটে লড়ার ক্ষমতা হারান, সেই দাবিতে ২০১৬ সালে শীর্ষ আদালতে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। মামলা দায়ের করেন আইনজীবী অশ্বিনীকুমার উপাধ্যায়। সাতবছর ধরে সেই মামলার শুনানির পর বৃহস্পতিবার শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রর বেঞ্চ জানায়, দেশের কোনও সাংসদ, বিধায়ক ও বিধান পরিষদের সদস্যের বিরুদ্ধে বিচারাধীন ফৌজদারি মামলা থাকলে তার বিরুদ্ধে সুয়ো মোটো বা স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করবে হাইকোর্ট।
সর্বোচ্চ আদালত আরও জানিয়েছে, কোনও বিশেষ, বাধ্যতামূলক ও বিরল কারণ না থাকলে কোনও জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে বিচারাধীন ফৌজদারি মামলার শুনানি স্থগিত করে রাখা যাবে না। এর জন্য প্রতিটি হাইকোর্টে বিশেষ বেঞ্চ গঠন করা হবে, যে বেঞ্চ রাজনীতিতে অপরাধীকরণ রোধের উদ্দেশ্যে ক্রমাগত নির্দেশিকা জারি করবে। এর জন্য রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল ও রাজ্য সরকারের অন্যান্য কর্মকর্তাদের সহায়তা নিতে পারে বেঞ্চ।
এদিন তিন বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়েছে, বিভিন্ন রাজ্যের নিম্ন আদালতগুলির জন্য এই বিষয় নিয়ে অভিন্ন নির্দেশিকা জারি করা বেশ কঠিন। তবে হাইকোর্টগুলির সুবিধার্থে শীর্ষ আদালতের নির্দেশ, হাইকোর্টগুলি তাঁদের অধীনে থাকা সমস্ত জেলা ও দায়রা আদালতের থেকে এই বিষয় সংক্রান্ত রিপোর্ট চাইতে পারে।
জনপ্রতিনিধি আইন, ১৯৫১-এর ৮(৩) ধারা অনুযায়ী, কোনও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে ২ বছর বা তার বেশি মেয়াদের কারাবাসের সাজা পেলে তিনি সাজা ঘোষণা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জনপ্রতিনিধির পদ হারাবেন। পাশাপাশি মুক্তির ৬ বছর পর্যন্ত ভোটেও লড়তে পারবেন না। কিন্তু এখানেই আপত্তি তুলেছেন মামলাকারী ও সুপ্রিম কোর্টের দ্বারা নিযুক্ত ‘আদালত বান্ধব’ বিজয় হংসরিয়া। এদিন আদালতে বিশেষ রিপোর্ট পেশ করে আদালত বান্ধব জানিয়েছেন, কোনও সরকারী কর্মচারী ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে তিনি স্থায়ীভাবে তাঁর চাকরি হারান। তাহলে কোনও জনপ্রতিনিধি জেলের সাজা পেলে মুক্তির ৬ বছরের মধ্যে ফের ভোটে দাঁড়াতে পারবেন কিভাবে?
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন