দীর্ঘ ২ বছর পর, গত শুক্রবার, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জামিন পান সাংবাদিক সিদ্দিকী কাপ্পান। কিন্তু, তারপরে এখনও তিনি লখনউ জেলে বন্দী রয়েছেন। এই প্রসঙ্গে, কারা বিভাগের এক আধিকারিক জানান, এখন কারাগারেই থাকবেন সাংবাদিক কাপ্পান। কারণ, তাঁর বিরুদ্ধে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ED) একটি মামলা এখনও বিচারাধীন রয়েছে।
সংবাদসংস্থা পিটিআই (PTI)-কে কারা বিভাগের জনসংযোগ আধিকারিক সন্তোষ ভার্মা জানান, ‘কাপ্পান কারাগারে থাকবেন, কারণ তাঁর বিরুদ্ধে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের একটি মামলা এখনও বিচারাধীন রয়েছে।’
সিদ্দিকী কাপ্পান একজন দিল্লি-ভিত্তিক মালায়ালী সাংবাদিক। ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে উত্তরপ্রদেশের হাথরাসে উচ্চবর্ণের ব্যক্তিদের দ্বারা এক দলিত নাবালিকার ধর্ষণ ও হত্যার খবর করতে যাওয়ার সময় কাপ্পানকে গ্রেপ্তার করে যোগী রাজ্যের পুলিশ।
কাপ্পানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি PFI ( পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া)-র সদস্য। তাঁকে ৪৫,০০০ টাকা দেওয়া হয়েছিল হাথরসে গিয়ে সন্ত্রাসী কর্যাকলাপ করার উদ্দেশ্যে। জানা যাচ্ছে, কাপ্পানের বিরুদ্ধে বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন (UAPA)-এর বিভিন্ন ধারায় মামলা দায়ের করে যোগী সরকার।
গত শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি (CJI) ইউ ইউ ললিত (UU Lalit) তাঁকে জামিন দিয়ে বলেন, সিদ্দিকী কাপ্পানকে আপাতত দিল্লিতেই থাকতে হবে। ৬ সপ্তাহ ধরে কাপ্পানকে নিজামুদ্দিন থানায় নিয়মিত হাজিরা দিতে হবে। কেরালায় ফিরে গেলেও তাঁকে স্থানীয় থানায় জানাতে হবে।
এদিন, সর্বোচ্চ আদালত নির্দেশে জানায়, সাংবাদিক কাপ্পানকে আগামী ৩ দিনের মধ্যে বিচারাধীন আদালতে পেশ করে মুক্তি দিতে হবে। তারপর, সোমবার কাপ্পানের মুক্তির আদেশ জারি করে আদালত। কাপ্পানের জামিন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আদেশকে স্বাগত জানায় বিরোধী দল এবং সাংবাদিক সংস্থাগুলি।
সকলে দাবি করেন, কাপ্পানকে 'সফট টার্গেট' বানিয়েছে উত্তরপ্রদেশ সরকার। আশা করা যায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের অধীনে তাঁর (কাপ্পানের) বিরুদ্ধে দায়ের করা অন্য মামলায়ও তাঁকে জামিন দেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, যোগী সরকারের পক্ষে শুক্রবার আদালতে সওয়াল করেন বিশিষ্ট আইনজীবী রাম জেঠমালানি। এদিন, কাপ্পানকে জামিন দেওয়ার আগে প্রধান বিচারপতি তাঁর কাছে জানতে চান- 'কাপ্পানের কাছ থেকে কেবল আইডি পাওয়া গেছে, আর কিছু সাহিত্যের বই পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। কোনও বিস্ফোরক পাওয়া গেছে কি?' এর উত্তরে না-সূচক জবাব দেন আইনজীবী জেঠমালানি।
এরপরেই, বিচারতি প্রশ্নসূচক বক্তব্যে জানান, 'প্রত্যেক ব্যক্তির মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে। আবেদনকারী জানিয়েছেন তাঁর প্রতি অন্যায় হচ্ছে, তিনি ন্যায়বিচার চেয়েছেন। ওনাকে তা দেওয়া কি আইনের চোখে অপরাধ হবে?'
তারপরেই, কাপ্পানের জামিন মঞ্জুর করে শীর্ষ আদালত। তবে, এখনও তিনি লখনউ জেল থেকে ছাড়া পাননি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন