বুধবার সকালে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হয়েছে ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’। এর ফলে বাংলায় তিনদিন ভারী দুর্যোগের পূর্বাভাস রয়েছে। আগাম সতকর্তা হিসাবে রাজ্যের ৯ জেলায় বুধবার থেকে শনিবার পর্যন্ত স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্কুল শিক্ষা দফতর। এই ন’টি জেলা হল উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, হুগলি, হাওড়া এবং কলকাতা। এই ৯ জেলায় বন্ধ থাকবে কলেজও।
আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে শুক্রবার সকালের মধ্যে পুরী থেকে সাগরদ্বীপের মাঝামাঝি ওড়িশার ভিতরকণিকা এবং ধামরা দিয়ে স্থলভাগে প্রবেশ করবে ঘূর্ণিঝড়টি। ল্যান্ডফলের সময় হাওয়ার গতিবেগ থাকবে ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার, সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার। এই মুহূর্তে 'ডানা' ওড়িশার পারাদ্বীপ থেকে ৫২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে, পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ থেকে ৬০০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়া থেকে ৬১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের জেরে আগাম সতকর্তা শুরু হয়েছে দুই রাজ্যের উপকূলবর্তী এলাকায়। যদিও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই বকখালির সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে, চলছে স্নান।
অন্যদিকে, গতকাল থেকেই মাইকে সতর্কবার্তা প্রচার করে যাচ্ছে প্রশাসন। বুধ ও বৃহস্পতিবার দোকান খুলতে নিষেধ করা হলেও, ঝড়ের প্রকোপ এখনও সরাসরি না পড়ায়, নিষেধ অগ্রাহ্য করেই সমুদ্র-পাড়ে দোকান খুলেছেন ব্যবসায়ীরা। এই এলাকায় হোটেল, লজগুলিও খালি করার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। আজ দুপুর আড়াইটে থেকে কাকদ্বীপ থেকে সাগর পর্যন্ত ভেসেল পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হবে। শুক্রবার পর্যন্ত বন্ধ থাকবে ভেসেল পরিষেবা। মোতায়েন করা হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (NDRF)।
আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বুধবার ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে দুই ২৪ পরগণা, দুই মেদিনীপুর, কলকাতা, হাওড়া, হুগলিতে। বৃহস্পতিবার ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে দুই মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা, ঝাড়গ্রাম, কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ায়। বৃহস্পতিবার বৃষ্টির লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে, দুই মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, ও কলকাতায়। শুক্রবারও বৃষ্টি চলবে এই সব জেলাগুলোতে। শনিবার থেকে অন্যান্য জেলায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমবে। তবে ভারী বৃষ্টি হতে পারে, মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে।
অন্যদিকে, ঘূর্ণিঝড়ের জেরে ইতিমধ্যেই তৎপর ওড়িশা প্রশাসন। ২৩ থেকে ২৫ অক্টোবর ১৪টি জেলায় সব স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ওড়িশা প্রশাসনের তরফে। এই তিন দিন বাতিল করা হয়েছে সরকারি কর্মীদের ছুটি। উপকূলে চলছে মাইকিং। ইতিমধ্যেই ফাঁকা করা হচ্ছে পুরী। পর্যটকদের মধ্যে হিড়িক পড়েছে পুরী ছাড়ার। পুরীর সমুদ্র সৈকতের আশেপাশে স্থানীয়দের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। দুর্ঘটনা এড়াতে লাইভগার্ডের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
মৌসম ভবন জানাচ্ছ, ওড়িশার জগৎসিংহপুর, কেন্দ্রাপাড়া, ভদ্রক এবং বালেশ্বরে হাওয়ার সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ১১০ কিলোমিটার ছাড়িয়ে যেতে পারে। কম প্রভাব পড়বে ময়ূরভঞ্জ, পুরী, ভুবনেশ্বর, কটক, সম্বলপুরে। বুধবার সন্ধ্যে থেকে বৃষ্টি শুরু হবে ওড়িশার পুরী, বালেশ্বর, ভদ্রক এবং জজপুরে।
বৃহস্পতিবার ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির সতকর্তা জারি করা হয়েছে ওড়িশার জগৎসিংহপুর, কেন্দ্রাপাড়া, ময়ূরভঞ্জ, কটক, ভদ্রক এবং বালাসোরে। এই জেলাগুলিতে লাল সতকর্তা জারি করা হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে এই ছয় জেলায় ছয় অভিজ্ঞ আইএএস অফিসারকে মোতায়েন করা হয়েছে। বিভিন্ন জেলায় মোতায়েন হয়েছে ২৮৮টি উদ্ধারকারী দল। রাজ্যে বাতিল হয়েছে ২০০-রও বেশি ট্রেন। রাজ্যের ৮০০টি দুর্যোগ আশ্রয়শিবিরের পাশাপাশি ৫০০টি অতিরিক্ত শিবির তৈরি করা হয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন