'সন্ত্রাসী বা হত্যাকারী হিসাবে আমাদের দেখবেন না। আমরা ষড়যন্ত্রের শিকার।' জেল থেকে মুক্তির পর এমনই দাবি করেছেন রাজীব গান্ধী হত্যা মামলার অন্যতম আসামী আর.পি রবিচন্দ্রন (RP Ravichandran)।
গত দুদিন আগে (শুক্রবার), প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী হত্যাকাণ্ডে (Rajiv Gandhi assassination) ৬ আসামীকেই মুক্তি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট (The Supreme Court)। এই তালিকায় নলিনী শ্রীহরনের পাশাপাশি আর.পি রবিচন্দ্রনের নামও ছিল।
রবিবার ভোররাতে, মাদুরাই সেন্ট্রাল জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি বলেন, 'উত্তর ভারতের মানুষের উচিত আমাদের সন্ত্রাসী বা খুনি হিসাবে না দেখে 'ভিকটিম' হিসাবে দেখা। ক্ষমতাধরেরা ঠিক করে দেন কে সন্ত্রাসী আর কে স্বাধীনতা সংগ্রামী। তবে, সময়ই আমাদের নির্দোষ হিসাবে বিচার করবে, সন্ত্রাসী হিসাবে যতই আমাদের অপবাদ দেওয়া হোক না কেন।'
এর আগে, নলিনী শ্রীহরন (Nalini Sriharan) তাঁদের 'সহায়তা'র জন্য তামিলনাড়ু এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে কৃতজ্ঞতা জানান।
জেল থেকে মুক্তির পর এদিন নলিনী বলেন, 'আমি আমার পরিবারের সঙ্গে থাকতে চাই। পরিবারের সকলে দীর্ঘ সময় আমার জন্য অপেক্ষা করছেন। আমি রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। তারা এই সময়ের মধ্যে আমাদের অনেক সাহায্য করেছেন।'
জেল থেকে মুক্তির পরে তিনি গান্ধী পরিবারের কারো সঙ্গে দেখা করবেন কিনা? জানতে চাইলে নলিনী বলেন, তিনি এমন কোনও পরিকল্পনা করছেন না।
তিনি বলেন, 'আমার স্বামী যেখানেই যাবে, আমি সেখানেই যাব। আমরা ৩২ বছর ধরে বিচ্ছিন্ন ছিলাম। আমি গান্ধী পরিবারের কারও সঙ্গে দেখা করার পরিকল্পনা করছি না।'
গত ১৮ মে, সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদের অধীনে বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করে রাজীব হত্যাকাণ্ডে সাজাপ্রাপ্ত এ জি পেরারিভালানকে (AG Perarivalan) মুক্তি দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট।
গত শুক্রবার, সেই মামলা বিবেচনা করতে গিয়েই বাকি ৬ আসামীকে মুক্তির নির্দেশ দেন বিচারপতি বি আর গাভাই (Justice B R Gavai) এবং বিচারপতি বি ভি নাগারথনার (Justice B V Nagarathna) বেঞ্চ। আদালত জানায়, বাকি আসামিদের ক্ষেত্রেও একই আদেশ প্রযোজ্য হবে।
আদালত আরও জানায়, ২০১৮ সালে এই সাজাপ্রাপ্তদের মুক্তির জন্য রাজ্যপালকে সুপারিশ করেছিল তামিলনাড়ু সরকার (Tamil Nadu Govt.)।
সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন (Tamil Nadu Chief Minister MK Stalin)।
শুক্রবার এক টুইট বার্তায় স্ট্যালিন বলেন, "ছয় জনের মুক্তির বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে আমি স্বাগত জানাই।"
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর হত্যাকাণ্ডে সাজাপ্রাপ্ত নলিনী ছাড়াও মুক্তি পান শ্রীহরন (Sriharan), সান্থান (Santhan), মুরুগান (Murugan), রবার্ট পায়াস (Robert Payas) এবং আর পি রবিচন্দ্রন (RP Ravichandran)।
১৯৯১ সালের ২১ মে, তামিলনাড়ুর (Tamil Nadu) শ্রীপেরামবুদুরে (Sriperumbudur) এক জনসভায় আত্মঘাতী বিস্ফোরণে নিহত হন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজবী গান্ধী (Rajiv Gandhi)।
জানা যায়, প্রতিবেশী শ্রীলঙ্কার (Sri Lanka) লিবারেশন টাইগার্স অফ তামিল ইলাম (LTTE)-র ধানু (Dhanu) নামে এক আত্মঘাতী মহিলা জঙ্গি বোমার সঙ্গে উড়িয়ে দিয়েছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে।
এরপর, রাজীব হত্যায় দোষী সাতজনের মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দেয় আদালত। কিন্তু, ২০১৪ সালে দোষীদের মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয় আদালত।
কিন্তু, এই দোষীদের মুক্তির ব্যাপারে সওয়াল করে তামিলনাড়ু সরকার। সরকারের সেই আবেদনের ভিত্তিতেই দফায়-দফায় খুনিদের মুক্তি দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন