"আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এতটাই অহংকারী যে, তিনি একটি সংবাদ মাধ্যমে গিয়ে নিরাপত্তা লঙ্ঘনের বিশদ বিবরণ দিয়েছেন। কিন্তু তিনি সংসদের ভিতরে কথা বলতে প্রস্তুত নন।" শুক্রবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে একথা বলেন কংগ্রেস মুখপাত্র সাংসদ জয়রাম রমেশ। তিনি আরও বলেন, বিরোধী সংসদ সদস্যদের দাবি নতুন কিছু নয়। কারণ এটাই রীতি। বড় ঘটনা বা যে কোনো বড় বিষয়ে সংসদের কার্যক্রম চলাকালীন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী সংসদের উভয় কক্ষে বক্তব্য পেশ করেন।
বুধবার সংসদে শীতকালীন অধিবেশন চলাকালীন দর্শকাসন থেকে আচমকা দুই যুবকের অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ নিয়ে পরপর দুদিন বিঘ্নিত লোকসভা ও রাজ্যসভার অধিবেশন। আর যার জেরে বৃহস্পতিবার সংসদে লোকসভা থেকে ১৪ জন সাংসদ ও রাজ্যসভা থেকে ১ জন, সর্বমোট ১৫ জন সাংসদকে বহিষ্কার করা হয়। শুক্রবার সকালে বরখাস্ত সাংসদরা হাতে প্লাকার্ড নিয়ে গান্ধী মূর্তির সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তাঁদের দাবি ছিল, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সংসদে এসে এই হামলা নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে হবে।
শুক্রবার এই প্রসঙ্গে কংগ্রেসের প্রধান কার্যালয়ে এক সাংবাদিক বৈঠক করেন কংগ্রেসের জনসংযোগ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত জয়রাম রমেশ। তিনি বলেন, “গত দু'দিন ধরে লোকসভা এবং রাজ্যসভায় কাজ হয়নি। ১৩ ডিসেম্বর সংসদের নিরাপত্তা লঙ্ঘনের বিষয়ে, আমরা উভয় কক্ষে শাহের বক্তব্যের দাবি জানিয়েছি। ১৪ ডিসেম্বর এবং আজ, ইন্ডিয়া জোটের দলগুলি দাবি করেছিল যে, তাঁকে অবশ্যই উভয় কক্ষে আসতে হবে এবং নিরাপত্তা লঙ্ঘনের বিষয়ে একটি বিশদ বিবৃতি দিতে হবে।“
রমেশ দাবি করেন, ইন্ডিয়া জোটের সাংসদরা উভয় কক্ষে লিখিতভাবে অমিত শাহের কাছ থেকে বিশদ বিবৃতি চেয়েছেন এবং তারপরেই সংসদের কাজ চলা উচিত। যদিও "সরকার আমাদের দাবিতে রাজি হয়নি এবং এই কারণেই উভয় কক্ষ গত দু'দিনে বারবার মুলতবি হয়েছে। ফলে অন্য কোনও আলোচনা হয়নি এবং কোনও কাজ হয়নি।"
তিনি আরও জানান, প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে তাদের কোনও প্রত্যাশা নেই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও সংসদে এসে বিশদ বিবৃতি দিতে প্রস্তুত নন। ইন্ডিয়া জোটের সাংসদরা বিজেপি সাংসদ প্রতাপ সিমহার বিষয়টি উত্থাপন করেছেন। যার সুপারিশে দু'জন দর্শক ভিজিটর স্লিপ নিয়ে লোকসভায় প্রবেশ করেছিলেন।
কংগ্রেস নেতা জানান, “নিরাপত্তা লঙ্ঘনের দিনে, সরকার বলেছিল যে এটি একটি ছোট ঘটনা। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নথিভুক্ত করা মামলাটি UA(P)A-এর অধীনে নথিভুক্ত করা হয়েছে”। পাশাপাশি, তিনি দাবি করেন, লোকসভার স্পীকার এবং অমিত শাহ জানিয়েছেন এটি কোনও বড় সমস্যা নয়। তা যে নয় তা প্রমাণিত, কারণ ইউএ(পি)এ-এর অধীনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এটি দেশের নিরাপত্তার সাথে সম্পর্কিত, এটি জাতীয় নিরাপত্তার সাথে সম্পর্কিত।"
রমেশ আরও বলেন, “যতক্ষণ পর্যন্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে না আসেন, ততক্ষণ আমি মনে করি সংসদের কাজকর্মের খুব কম সম্ভাবনা রয়েছে। যেহেতু মাত্র চার থেকে পাঁচ দিন বাকি, তাই আমাদের পক্ষ থেকে মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং ইন্ডিয়া জোটের সমস্ত নেতারা রাজ্যসভার স্পীকার জগদীপ ধনকড়কে আমাদের দাবি সম্পর্কে সচেতন করেছেন।”
রমেশ এই ঘটনাটিকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে অভিহিত করে জানান, আমাদের মূল উদ্দেশ্য অধিবেশন বাতিল নয়। আমরা চাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সংসদে এসে বিবৃতি দিন।“ কিন্তু সরকারপক্ষ অনড় এবং তারা সংসদে এসে বিবৃতি দিতে চান না। তাদের অবশ্যই বলতে হবে যে এই ঘটনায় বিজেপি সাংসদের ভূমিকা কী ছিল। ইন্ডিয়া জোটের দলগুলি চায় তিনি সংসদে আসুন। কারণ এটিই শেষ অধিবেশন।”
পাশাপাশি তিনি এদিন ১৫ জন সাংসদের বহিষ্কার নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তাঁর কথায়, "সাংসদরা কী দোষ করেছে? তাঁদের দাবি ছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অধিবেশনে আসতে হবে। এই ঘটনার জন্য সংসদে তাকে বিবৃতি দিতে হবে এবং মাইসুরের বিজেপি সাংসদের ভূমিকা এবং তার বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে সে সম্পর্কে জানাতে হবে। কিন্তু তাঁরা আমাদের দাবি মেনে নেওয়া ঠিক মনে করেননি।”
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন