মেঘভাঙা বৃষ্টিতে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতিতে কার্যত শ্মশানে পরিণত হয়েছে উত্তর সিকিম। বুধবার সকাল থেকে উত্তর সিকিমের দক্ষিণ লোনক হ্রদে মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে উত্তাল হয়ে উঠেছে তিস্তা। জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে ঘরবাড়ি, সেনা ছাউনি। এখনও পর্যন্ত ২২ জন সেনা জওয়ান-সহ অন্ততপক্ষে ১০২ জন নিখোঁজ। প্রাণ হারিয়েছেন ১৪ জন। ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিকিমের গ্যাংটক, নামচি, পাকিয়ং এবং মঙ্গন জেলাও। ভয়ানক প্রভাব পড়েছে উত্তরবঙ্গের একাধিক অঞ্চলেও।
হিমাচলপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ডের পর এবার গোটা সিকিম জুড়ে তৈরি হয়েছে বন্যা পরিস্থিতি, যা শুরু হয়েছে উত্তর সিকিমের লোনক হ্রদে মেঘভাঙা বৃষ্টির ফলে। জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে সিকিমের একাধিক জাতীয় সড়ক। এমনকি শিলিগুড়ি থেকে সিকিম যাওয়ার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ১০ নম্বর জাতীয় সড়কও তিস্তার জলে খড়কুটোর মতো ভেসে গিয়েছে।
বাংলা-সহ গোটা দেশের বহু পর্যটকও এই মুহূর্তে আটকে রয়েছেন সিকিমের বিভিন্ন এলাকায়। যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগও করা যাচ্ছে না। রাজ্যের পর্যটকদের ফেরাতে বৃহস্পতিবার নবান্নে বিশেষ ওয়ার রুম খোলা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে নবান্ন সূত্রে। অন্যদিকে, দক্ষিণ লোনক হ্রদে মেঘভাঙা বৃষ্টি নিয়ে একটি স্যাটেলাইট-ভিত্তিক সমীক্ষা করেছে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর বিশেষ বিভাগ ন্যাশনাল রিমোট সেন্সিং সেন্টার (NRSC)। সেই সমীক্ষায় লোনক হ্রদের ২৮ সেপ্টেম্বর (বৃষ্টির আগে) এবং ৪ অক্টোবরের (বৃষ্টির পরে) উপগ্রহ ছবি মিলিয়ে দেখা হয়েছে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, মেঘভাঙ্গা বৃষ্টির ফলে লোনক হ্রদ ছাপিয়ে চারপাশের প্রায় ১০৫ হেক্টর অঞ্চল কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে।
লাগামছাড়া বৃষ্টির পাশাপাশি চুংথাং বাঁধ থেকে জল ছাড়ার ফলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। রাজ্যের মোট ১৪টিরও বেশি সেতু ভেঙে পড়েছে। এই নিয়ে সিকিমের মুখ্যসচিব ভিবি পাঠক জানিয়েছেন, “বন্যার কারণে রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশনের (বিআরও) অধীনস্ত ৯টি এবং সিকিম সরকারের অধীনস্ত ৫টি, মোট ১৪টি সেতু ভেঙে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। মঙ্গন জেলার ডিকচু, চুংথাং, গ্যাংটক জেলার সিংতাম এবং পাকিয়ং জেলার রংপোর অহু মানুষ এখনও পর্যন্ত নিখোঁজ।” প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও সিকিমের এই বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সিকিম সরকারকে সবরকম সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন