প্রতিটি সম্প্রদায়ের বৈষম্যমূলক আইন ও রীতিনীতি পরিবর্তনের প্রচেষ্টা সেই সম্প্রদায়ের ভেতর থেকে আসা উচিত এবং বাইরে থেকে চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়। শনিবার কোঝিকোড়ে অভিন্ন দেওয়ানী বিধি-র (ইউসিসি) উপর এক জাতীয় সেমিনারের উদ্বোধন করে একথা বলেন সিপিআইএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি।
সেমিনারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ইয়েচুরি আরও বলেন, ভারতের জনগণের ভাষা ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্য বজায় রাখার অধিকার আছে। জনসাধারণকে সেই লক্ষ্যে এক বড় রাজনৈতিক লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইয়েচুরি আরও বলেন, আরএসএস এবং তার রাজনৈতিক শাখা বিজেপি’র আসল লক্ষ্য চরম অসহিষ্ণু ফ্যাসিস্ট লক্ষণসম্পন্ন হিন্দুরাষ্ট্র গড়া। দেশের ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক চরিত্রের সংবিধানকে আসলে বদলাতে চায় তারা। সেই অভিমুখে মেরুকরণের হাতিয়ার অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বিতর্ক। এই প্রয়াস রুখতে হবে আমাদের।”
ইয়েচুরি বলেন, “এটি একটি গুরুতর সমস্যা যা দেশের সামাজিক কাঠামো পরিবর্তন করতে পারে এবং ভারতের বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের ধারণাকে ধ্বংস করতে পারে। এই নীতি সংবিধানের চারটি স্তম্ভকে ধ্বংস করবে।” ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসাবে আগামী দিনে থাকবে কিনা তা নির্ধারণ করবে এই অভিন্ন দেওয়ানী বিধি।
ইউসিসি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বক্তব্য আসন্ন লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে সমাজে বিভাজন তৈরির লক্ষ্যে এক রাজনৈতিক কৌশল হিসাবে অভিহিত করে, সিপিআইএম সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিজেপি ২১ তম আইন কমিশনের দেওয়া পরামর্শগুলিকে প্রকাশ্যে অস্বীকার করছে। যেখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ভারতের মতো দেশে, যেখানে বহু বৈচিত্র্য আছে, সেখানে অভিন্ন নাগরিক বিধি প্রয়োজনীয় বা কাম্য নয়।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, আইনসম্মত হওয়া সত্ত্বেও, বিধবা বিবাহকে দেশের অনেক অংশে সমালোচনা করা হয়, যেখানে অসবর্ণ বিয়ে হলে অনেক সময়েই অনার কিলিং-এর ঘটনা ঘটে এবং খাপ পঞ্চায়েতের মাধ্যমে আইন প্রয়োগ করা খুবই সাধারণ বিষয়৷ হিন্দু অবিভক্ত পরিবারগুলি যে কর ছাড় ভোগ করে তা অন্য কোনও সম্প্রদায় ভোগ করে না। তাহলে সরকার কীসের অভিন্নতার কথা বলছে?”
ইয়েচুরি বলেন, প্রস্তাবিত ইউসিসির উদ্দেশ্য শুধুমাত্র হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করা। কারণ উত্তর পূর্বের বেশ কিছু সম্প্রদায়, উপজাতি, খ্রিস্টান, পার্সি এবং শিখদের প্রস্তাবিত এই বিধি থেকে বাদ পড়ার সম্ভাবনা ছিল।
ইয়েচুরি বলেন, ভারতের বহুত্ববাদকে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। দেশের সংবিধান আমাদের দেশের বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠীকে তাদের সংস্কৃতি, অধিকার, ঐতিহ্যকে রক্ষার অধিকার দিয়েছে। ভারতের এই বৈচিত্র্যকে মেনে নিয়েই এগিয়ে চলা উচিত। ইউসিসি-র দিকে এগিয়ে যাওয়া এই ঐতিহ্যের পরিপন্থী। বিজেপি সমাজে অভিন্নতা আনার নাম করে মানুষকে ভাগ করতে চাইছে। অভিন্নতা অর্থ সমতা নয়।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন