১) বিরোধী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে ভোটে লড়তে হলে, তার প্রস্ততি অনেক আগে থেকেই নিতে হবে। ভোটের মুখে সমঝোতা করলে, তা সবসময় ফলপ্রসূ হবে না।
২) দেশজুড়ে বিরোধী ঐক্য নিয়ে সংবাদমাধ্যম খুবই উত্তেজিত। কোন নেতা কার সঙ্গে বৈঠক করছেন, কী বক্তব্য দিচ্ছেন ‘উপার উপার কা’ উঁচুতলার সেই কথা তুলে ধরে তারা। কিন্তু, এভাবে ঐক্য হবে না। কোনও বিরোধী ঐক্য গড়ে উঠবে না। এই ঐক্য হতে হবে নীচুতলায়, রাজ্য স্তরে। শুধু ভোটের আগে একটা বোঝাপড়া নয়, একটি ঐক্যবদ্ধ বিরোধী হিসাবে রাজ্য স্তরে কাজ করে যেতে হবে। সামনে অনেকগুলি রাজ্যে নির্বাচন আছে। সেগুলিতে আগে থেকেই এই বোঝাপড়ার নজির গড়তে হবে।
মঙ্গলবার, ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেছেন সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি।
ত্রিপুরায় দ্বিতীয়বার সরকার গঠন করেছে বিজেপি। আর, নির্বাচনের মুখে বাম-কংগ্রেস সমঝোতা করেও সেভাবে ভালো ফল কেন পাওয়া গেল না? সেই প্রশ্নের উত্তরে ‘সমঝোতার পদ্ধতি’ নিয়ে মুখ খুলেছেন ইয়েচুরি।
দেশজুড়ে বিজেপি বিরোধিতায় কংগ্রেসের সঙ্গে সখ্যতা রেখে সামনের দিকে এগোনোর ক্ষেত্রে জাতীয় স্তরে যে শীর্ষ নেতারা প্রবলভাবে আগ্রহী, তাদের মধ্যে অন্যতম মুখ হলেন সীতারাম ইয়েচুরি।
তিনি এদিন বলেন, ভোটের মুখে সমঝোতা সাফল্য পায় না। এর পাশাপাশি ত্রিপুরায় ক্ষমতায় ফিরতে না পারায় আরও তিনটি কারণ তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।
ইয়েচুরির কথায়, গত পাঁচ বছরে ত্রিপুরায় গণতান্ত্রিক পরিবেশ নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারের ওপর ভয়ানক আক্রমণ হয়েছে। আসলে কোনও বিরোধী দলই মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি, তাঁদের কাছে যেতে পারেনি। ভোটের ছয় মাস আগে বিরোধীরা সেখানে দলীয় কার্যালয় খুলতে পারত না। ধারাবাহিকভাবে সন্ত্রাস চলেছে। এর পাশাপাশি, ভোটে অর্থ ও পেশি শক্তির ব্যবহার করা হয়েছে। তবে, বিরোধীদের আরও আগে থেকে জোটবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন ছিল।
তিনি আরও বলেন, আমরা ত্রিপুরায় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আমরা সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করেছিলাম। যাতে আংশিকভাবে সফল হয়েছি। তিপ্রা মথার সঙ্গে সিপিএমের আলোচনা শুরু হয়েছিল। কিন্তু, আচমকাই তিপ্রা মথা বিজেপির সঙ্গে আলোচনা শুরু করায় সিপিএমের সঙ্গে আলোচনা ভেস্তে যায়। ফলে বিজেপির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াই সম্ভব হয়নি।
তাই এই সবের মুখোমুখি হতে ও মোকাবিলা করতে এবং এই সব শক্তিকে পরাস্ত করতে… ভারতীয় সংবিধান, গণতন্ত্র এবং আইনের শাসন রক্ষার লক্ষ্যে ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন।
ইয়েচুরি জানান, মাত্র মাস দুয়েক আগে ত্রিপুরায় কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল। তবে, এই সমঝোতা বা বোঝাপড়া আরও অনেক আগে থেকে শুরু করা উচিত ছিল।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন