সর্বভারতীয় পরীক্ষায় প্রথম হওয়া থেকে সিপিআইএম-র সাধারণ সম্পাদক, লড়াইটা খুব একটা সহজ ছিল না সীতারাম ইয়েচুরির কাছে। সিপিআইএম-র দ্বিতীয় প্রজন্মের প্রথম সারির নেতৃত্বের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন তিনি।
১৯৫২ সালের ১২ আগস্ট বর্তমান চেন্নাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন সীতারাম ইয়েচুরি। তাঁর বাবা এস এস ইয়েচুরি ছিলেন একজন ইঞ্জিনিয়র। তিনি অন্ধ্রপ্রদেশ স্টেট রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের অধীনে কাজ করতেন। মা ছিলেন একজন সরকারি আধিকারিক। হায়দরাবাদে বড় হয়ে ওঠেন ইয়েচুরি।
অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র হিসেবেই পরিচিত ছিলেন ইয়েচুরি। হায়দরাবাদের অল সেন্ট হাইস্কুলে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। সিবিএসই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ভারতের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। তেলেঙ্গানা আন্দোলনে রাজ্য অশান্ত হলে তাঁকে দিল্লিতে পড়তে পাঠানো হয়। দিল্লির সেন্ট স্টিফেন কলেজ থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক হন। জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় পাস করেন। স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর দুই ক্ষেত্রেই তিনি ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছিলেন। তারপর অর্থনীতিতেই পিএইচডি করতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু জরুরী অবস্থার সময় তিনি গ্রেফতার হওয়ার তাঁর পিএইচডি বাতিল হয়ে যায়।
এসএফআই-র হাত ধরে ছাত্রজীবনে রাজনীতির হাতেখড়ি হয় সীতারামের। ১৯৭৪ সালে তিনি এসএফআই-তে যোগ দেন। ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা লাভ করেন। জরুরী অবস্থার পর তিনি জেএনইউ-র ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। জরুরী অবস্থার সময় জেএনইউ উত্তাল হয়ে ওঠে ছাত্র আন্দোলনে। সেই সময় ছাত্ররা চেয়েছিলেন ক্যাম্পাসে এসে প্রধানমন্ত্রী তথা আচার্য ইন্দিরা গান্ধীকে স্মারকলিপি গ্রহণ করতে হবে। ছাত্রদের দাবি মেনে ক্যাম্পাসে আসেন ইন্দিরা গান্ধী। ইন্দিরা গান্ধীর সামনেই স্মারকলিপি পড়েছিলেন সীতারাম ইয়েচুরি।
১৯৭৮ সালে ইয়েচুরি এসএফআই-র সর্বভারতীয় যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন। পরে এসএফআই-র সর্বভারতীয় সভাপতি হন। সীতারাম ইয়েচুরিই প্রথম ছাত্রনেতা যিনি কেরালা অথবা পশ্চিমবঙ্গের বাইরে অন্য কোনও রাজ্য থেকে এসএফআই-র সর্বভারতীয় সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
১৯৮৪ সালে সিপিআইএম-র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯২ সালে পলিটিব্যুরোর সদস্য হন। ২০১৫ সালে সিপিআইএম-র ২১তম পার্টি কংগ্রেসে দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন সীতারাম ইয়েচুরি। ২০১৮ সালে ২২তম পার্টি কংগ্রেসে পুনরায় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০২২ সালে ২৩তম পার্টি কংগ্রেস থেকে তৃতীয়বারের জন্য সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০০৫ সালে পশ্চিমবঙ্গ থেকে সিপিআইএম-র রাজ্যসভার সাংসদ নির্বাচিত হন সীতারাম ইয়েচুরি। ২০১৭ সালে সংসদে সেরা সাংসদ পুরস্কার পেয়েছিলেন ইয়েচুরি।
সীতারাম ইয়েচুরির ধূমপানের নেশা ছিল। জানা যায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দিনেও নাকি তিনি ধূমপান করেছিলেন। পার্টির অনেক নেতা নিষেধ করলেও তিনি শোনেননি। বহু মিটিং-এ তিনি মজা করে বলতেন, আমিই হয়তো একমাত্র ব্যক্তি যাঁর নামের মধ্যে সীতা এবং রাম দুটোই আছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ৩টে ৫ মিনিটে তাঁর দেহ দিল্লি এইমসে দান করা হয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের কাজে লাগানো হবে তাঁর দেহ।
সীতারাম ইয়েচুরির প্রয়াণে শোকস্তব্ধ রাজনৈতিক মহল। দেশের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু শোকজ্ঞাপন করেছেন। তিনি এক্স মাধ্যমে লেখেন, "সিপিআইএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির মৃত্যুর খবর জানতে পেরে আমি অত্যন্ত দুঃখিত। ছাত্রনেতা হিসেবে শুরু। এরপর জাতীয় স্তরের রাজনীতি, দক্ষ সাংসদ হিসেবে দেশের রাজনীতিতে তিনি এক অনন্য ও প্রভাবশালী কন্ঠ হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেছিলেন। একটি নির্দিষ্ট আদর্শে বিশ্বাসী থাকা সত্ত্বেও, তিনি পার্টি লাইন ছাড়িয়ে অনেক বন্ধু পেয়েছিলেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন