গোটা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় সাম্প্রতিককালে বেশ কিছু পরিবর্তন দেখা গিয়েছে। কিছুদিন আগেই দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস বই থেকে মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস সরিয়ে দেওয়া নিয়ে তোলপাড় হয়ে গিয়েছিল সারা দেশ। এবারে দশম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকের প্রস্তাবনা থেকে উধাও হল ‘সমাজতান্ত্রিক’ ও ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দ দুটি। তেলেঙ্গানার দ্য স্টেট কাউন্সিল অফ এডুকেশন রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (এসসিইআরটি)-এর দশম শ্রেণির সোশ্যাল স্টাডিজ বিষয়ের পাঠ্যপুস্তকের প্রথম পাতায় ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনার ছবি থেকে ‘বাদ’ পড়েছে ‘সমাজতান্ত্রিক’ ও ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দ দুটি। এই নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে বিতর্ক।
সোশ্যাল স্টাডিজের এক শিক্ষক এ নিয়ে বলেছেন, “অষ্টম ও দশম শ্রেণির সোশ্যাল স্টাডিজের সিলেবাসে ভারতীয় সংবিধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ রয়েছে। বইয়ের ভিতরের পাতায় এই ‘সমাজতান্ত্রিক’ ও ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দদুটি যথাস্থানে থাকলেও একদম প্রথম পাতা থেকে সেগুলি সরিয়ে দেওয়া খুব বড় ভুল হয়েছে।”
প্রসঙ্গত, ১৯৫০ সালে যখন প্রথমবার ভারতীয় সংবিধান তৈরি হয় তখন সেখানে ভারতকে একটি ‘সার্বভৌম গণতান্ত্রিক প্রজাতান্ত্রিক’ রাষ্ট্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ১৯৭৬ সালে ৪২তম সংশোধনের পর সেখানে যোগ করা হয় ‘সমাজতান্ত্রিক’ ও ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দ দুটি। এবারে চলতি শিক্ষাবর্ষে দশম শ্রেণির সোশ্যাল স্টাডিজের পাঠ্যপুস্তকের প্রস্তাবনা থেকে ওই দুটি শব্দই উধাও হয়ে গিয়েছে।
প্রথম পাতায় সংবিধানের প্রস্তাবনাতে এই গুরুতর ‘ভুল’ সামনে এলে এসসিইআরটি-এর ডিরেক্টর এম রাধা রেড্ডি একটি প্রেস বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, “প্রথম পাতায় প্রস্তাবনার ছবিটি ডাউনলোড করতে গিয়ে কোনওভাবে প্রকাশকের নজর এড়িয়ে গিয়েছিল। এই ভুল একেবারেই অনিচ্ছাকৃত। তবে অন্যান্য বইয়ে সঠিক ও সংশোধিত প্রস্তাবনাই ছাপা হয়েছে এবং এই সোশ্যাল স্টাডিজ বইয়ের অন্যান্য জায়গাতেও শব্দ দুটি রয়েছে। শুধুমাত্র প্রস্তাবনাতেই অসাবধানতাবশত এই ভুল হয়ে গিয়েছে।” তবে কার বা কাদের গাফিলতিতে এই ভুল হয়েছে তা খুঁজে বের করার জন্য কোনওরকম তদন্ত শুরু করা হয়েছে কি না তা নিয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করেননি।
এ নিয়ে তেলেঙ্গানা স্টেট ইউনাইটেড টিচার্স ফেডারেশন (টিএসইউটিএফ)-এর সম্পাদক চাভা রবি জানিয়েছেন, “কীভাবে প্রকাশকের চোখ এড়িয়ে ভারতীয় প্রস্তাবনার ভুল ছবি ডাউনলোড হয়ে দশম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকের প্রথম পাতায় ছাপা হয়ে গেল? এই ধরণের কিছু ভুল প্রতি বছরই বইয়ের ভিতরে দেখা যায় এবং সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু প্রথম পাতাতেই এত বড় ভুল হয় কী করে?”
তিনি আরও জানিয়েছেন, “আমরা এসসিইআরটি-এর ডিরেক্টরকে এই নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছি। তিনি এই ভুল অনিচ্ছাকৃত বলে জানিয়েছেন। তাঁর মতে ছবিটি গুগল থেকে ডাউনলোড করা হয়েছে। কিন্তু আমার মনে হয়ে, প্রকাশক, লেখক কিংবা উপদেষ্টার মধ্যেই কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে এই ভুল করেছেন। আমরা চাই এই ঘটনা নিয়ে তদন্ত হোক।”
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন