১০টি সংস্থার মোট ঋণ ছিল ৬১,৮৩২ কোটি। কিন্তু তা ১৫,৯৭৭ কোটি টাকায় রফা করে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্ক। অর্থাৎ ১০টি সংস্থার মোট ৪৫,৮৫৫ কোটি টাকার ঋণ মকুব করে দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, আদানি গোষ্ঠী এই ১০টি সংস্থা কিনে নেওয়ার পরই সংস্থাগুলির ৪৫,৮৫৫ কোটি টাকার ঋণ মকুব করা হয়। এই সংস্থাগুলি দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিল। এই নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে কংগ্রেস সহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলি। এমনকি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কের ভূমিকাতেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক ইউনিয়নগুলি।
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ এক্স মাধ্যমে লেখেন, "অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক এমপ্লয়েজ অ্যাসোসিয়েশন প্রকাশিত একটি তথ্যে দেখা যাচ্ছে ১০টি সংস্থার প্রায় ৬২ হাজার কোটি ঋণ প্রায় ১৬ হাজার কোটিতে নিষ্পত্তি করেছে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্ক। আর এই সমস্ত কোম্পানিগুলি আদানি গ্রুপ কিনেছিল। যিনি আবার নন বায়োলজিকাল প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বন্ধু। অর্থাৎ ব্যাঙ্কগুলি সংস্থাগুলির ৭৪ শতাংশ ঋণ মকুব করেছে"।
অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক এমপ্লয়েজ অ্যাসোসিয়েশনের তালিকায় দেখা যাচ্ছে, এইচডিআইল (বিকেসি প্রকল্প)-র ঋণের পরিমাণ ছিল ৭,৭৯৫ কোটি টাকা। আদানি প্রপার্টিজ সেই সংস্থা কেনার পরে ঋণের পরিমাণ হয়ে যায় ২৮৫ কোটি (৯৬% ঋণ মকুব)। রেডিয়াস এস্টেট অ্যান্ড ডেভলপার্স কিনেছে আদানি গুড হোমস। এই সংস্থার ঋণের পরিমাণ ছিল ১৭০০ কোটি টাকা। আদানি গোষ্ঠী কেনার পর ঋণ ধার্য করা হয় ৭৬ কোটি (৯৬% ঋণ মকুব)।
একইভাবে ন্যাশনাল রেয়ন কর্পোরেশনের ঋণের পরিমাণ ছিল ১,১৭৫ কোটি টাকা। আদানি গোষ্ঠী কেনার পর তার ঋণ কমিয়ে করা হয় ১৬০ কোটি টাকা (৮৬% ঋণ মকুব)। এসার পাওয়ার এম.পি লিমিটেডের ঋণের পরিমাণ ছিল ১২,০১৩ কোটি টাকা। আদানি পাওয়ার লিমিটেড কেনার পর ওই সংস্থার ঋণের পরিমাণ হয় ২,৫০০ কোটি টাকা (৭৯% ঋণ মকুব)। দিঘি পোর্ট লিমিটেডের ঋণের পরিমাণ ছিল ৩,০৭৫ কোটি টাকা। আদানি পোর্ট অ্যান্ড সেঝ লিমিটেডের হাতে যাওয়ার পর ঋণের পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ৭০৫ কোটি টাকা (৭৭% ঋণ মকুব)।
আবার ল্যানকো অমরকন্টক পাওয়ারের ঋণের পরিমাণ ছিল ১৫,১৯০ কোটি টাকা। আদানি পাওয়ার সেই সংস্থা কেনার পর ঋণ কমে হয় ৪,১০১ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৭৩% ঋণ মকুব করা হয়েছে। কোস্টাল এনার্জেন লিমিটেডের ঋণের পরিমাণ ছিল ১২,৩০০ কোটি টাকা। আদানি পাওয়ার লিমিটেড কেনার পর ঋণ হয় ৩,৫০০ কোটি টাকা (৭২% ঋণ মকুব)। আদিত্য এস্টেটস-র ঋণ ছিল ৫৯৩ কোটি টাকা। আদানি গ্রুপ কেনার পর ঋণের পরিমাণ কমিয়ে করা হয় ২৬৫ কোটি টাকা (৫৫% ঋণ মকুব)। করাইকল পোর্টের ঋণ ছিল ২,৯৫৯ কোটি টাকা। আদানি গ্রুপের হাতে যাওয়ার পর ঋণ হয় ১,৪৮৫ কোটি টাকা (৪৩% ঋণ মকুব)। কোরবা ওয়েস্ট পাওয়ার কোম্পানির ঋণ ছিল ৫,০৩২ কোটি টাকা। আদানি পাওয়ার কেনার পর ওই সংস্থার ঋণ কমে দাঁড়ায় ২,৯০০ কোটিতে। অর্থাৎ ছাড় দেওয়া হয় ৪২%।
অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক এমপ্লয়েজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রাজেন নাগর বলেন, “মোদী সরকার নানা উপায়ে আদানিদের সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে, তা কার্যত স্পষ্ট। এর জন্য দেউলিয়া আইনকেও ব্যবহার করতে ছাড়েনি। অত কম টাকায় বকেয়া ঋণের রফা করে আদানিদের সংস্থাগুলির লাভের পথ চওড়া করা হয়েছে। লোকসান গুনতে বাধ্য করা হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিকে।’’
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন