বিলকিস বানো ধর্ষণকান্ডে ১১ জন ধর্ষকের মুক্তিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে যে পিটিশন জমা পড়েছিল, তা নিয়ে শুনানিতে গুজরাট সরকারের প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। দু’সপ্তাহ পর এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে শীর্ষ আদালতে।
জানা যাচ্ছে, ধর্ষণকাণ্ডে মুক্ত আসামীদের এই মামলায় পার্টি করার নির্দেশ দিয়েছে প্রধান বিচারপতি এন ভি রমনার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ।
বিলকিস বানোর ন্যায় বিচার চেয়ে শীর্ষ আদালতে মোট তিনটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। সিপিআইএম পলিটব্যুরো সদস্য সুভাষিণী আলি, তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ মহুয়া মৈত্র এবং অন্য এক আবেদনকারী - স্বাধীনতা দিবসে গুজরাট সরকার কর্তৃক আসামীদের মুক্তির বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দাখিল করেন।
আবেদনকারীদের পক্ষে এই পিটিশন দাখিল করেন আইনজীবী কপিল সিব্বাল, আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি এবং আইনজীবী অপর্ণা ভাট। সুভাষিণী আলির পক্ষ থেকে সওয়াল করেন আইনজীবী কপিল সিব্বাল। মহুয়া মৈত্র-র পক্ষে সওয়াল করেন অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি।
বৃহস্পতিবার, এই মামলা নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন বম্বে হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি ইউ ডি সালভি (UD Salvi)। সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষতকারে তিনি বলেন, 'এই ধরনের (ধর্ষকদের মুক্তি দিতে) ক্ষেত্রে, রাজ্য সরকারকে কেন্দ্রীয় সরকারের পরামর্শ নিতে হয়। এখানে কি তা হয়েছে? আমার জানা নেই। যদি তা করে থাকে, তাহলে কেন্দ্রীয় সরকার কী বলেছিল? তাঁরা (মামলাকারীরা) কি এই কথা বিচারপতির কাছ থেকে জানতে চেয়েছেন? আমি জানি না, তারা (গুজরাট সরকার) এই প্রক্রিয়াটি করেছে কি না।'
প্রসঙ্গত, গত ১৫ আগস্ট গুজরাট সরকার ‘রেমিশন পলিসি’ অনুসারে বিলকিস বানো ধর্ষণকান্ডে অভিযুক্ত ১১ জনকেই মুক্তি দেয়। যে ঘটনায় দেশজুড়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ধর্ষক ১১ জনের মুক্তির পর তাঁদের মালা দিয়ে সম্বর্ধনা জানানোর ছবি ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যে ঘটনার প্রতিবাদে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ উগরে দেন নেটিজেনরা।
এই ঘটনার পর, গত ১৭ আগস্ট এক বিবৃতিতে বিলকিস বানো জানান, '১৫ আগস্ট ২০২২, আমাকে আমার বিগত ২০ বছরের ভয়ঙ্কর অতীত পুনরায় মনে করিয়ে দিয়েছে। যখন থেকে আমি শুনেছি যে ওই ১১ জন আসামী ছাড়া পেয়েছে, তখন থেকেই আমি নির্বাক এবং অসাড় হয়ে পড়েছি। ওরা আমার পরিবার এবং আমার জীবনকে ধ্বংস করে দিয়েছে এবং আমার থেকে আমার তিন বছরের মেয়েকেও কেড়ে নিয়েছে।'
তিনি আরও জানান, 'একজন নারীর অধিকারের জন্য লড়াই, তাঁর উপর হওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচার এভাবে শেষ হতে পারে কী করে? আমি দেশের শীর্ষ আদালতের উপর আস্থা রেখেছিলাম। মানসিক আঘাত কাটিয়ে আবার ধীরে ধীরে বাঁচতে শিখছিলাম। আমার যন্ত্রণা এবং বিশ্বাস শুধু আমার একার ছিল না, ছিল সেইসব মেয়েদের জন্য যাঁরা আদালতে ন্যায়বিচার পাওয়ার আশায় ক্রমাগত লড়াই করছেন। অথচ এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কেউ একবারও আমার নিরাপত্তা এবং ভালোভাবে বাঁচার কথা চিন্তাও করল না।'
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন