দিল্লির দূষণ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে তীব্র ভর্ৎসনার মুখে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার। শীর্ষ আদালতের নির্দেশ ছাড়া দূষণ নিয়ন্ত্রণে লাগু করা গ্র্যাপ ৪ প্রত্যাহার করতে পারবে না প্রশাসন।
দিল্লির বাতাসের গুণমান বর্তমানে 'অতি ভয়ঙ্কর' পর্যায়ে রয়েছে। যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অভয় এস ওকা এবং বিচারপতি এজি মাসিহর বেঞ্চ। দুই বিচারপতির বেঞ্চ জানতে চায়, AQI ৩০০ অতিক্রম করার তিন দিন পর কেন গ্র্যাপ ৩ লাগু করা হল? কীসের জন্য ৩ দিন অপেক্ষা করা হল?
এর উত্তরে কেন্দ্রের আইনজীবী জানিয়েছিলেন, একিউআই নেমে যায় তা পর্যবেক্ষণের জন্য অপেক্ষা করা হয়েছিল।
এই উত্তরে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে বেঞ্চ। সুপ্রিম কোর্ট পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, AQI যদি ৩০০-র নীচেও নেমে যায় তাহলেও আদালতের অনুমতি ছাড়া গ্র্যাপ ৪ প্রত্যাহার করা যাবে না।
প্রসঙ্গত, গত কয়েকদিন ধরেই দিল্লির আকাশ ধোঁয়ার চাদরে ঢাকা পড়ছিল। সোমবার তা চরমে ওঠে। রাজধানীর AQI আজ সকাল ৭টায় ৪৮১ পরিমাপ করা হয়। যা অতি ভয়ঙ্কর হিসেবে বিবেচিত হয়। সকাল ৯টায় যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৪৮৫-তে। রাজধানীর দৃশ্যমানতা একদম কমে গেছে। ১৫০ মিটার দূরে থাকা কোনো বস্তুকেও দেখা যাচ্ছে না।
পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য একাধিক নির্দেশিকা জারি করেছে দিল্লি সরকার। দিল্লি এনসিআরে 'গ্র্যাপ' বা Graded Response Action Plan (GRAP) চালু করেছে। এই প্ল্যানের ৪টি পর্যায় আছে। ইতিমধ্যেই ৩টি পর্যায় কার্যকর হয়েছে। গ্র্যাপ ৪-ও চালু করা হয়।
উল্লেখ্য, একিইউআই ‘খারাপ’ হলে গ্র্যাপ-১ চালু করা হয়। সে সময় রাস্তায় মাঝেমধ্যে জল ছেটানো হয়। বর্জ্য খোলা জায়গায় পোড়ানো নিষিদ্ধ করা হয়। একিউআই ৩০০-র গণ্ডি ছাড়ালে গ্র্যাপ-২ চালু করা হয়। তখন ধুলো নিয়ন্ত্রণে রাস্তায় প্রতিদিন জল ছেটানো হয়। জেনারেটরের ব্যবহার কমাতে বিদ্যুতের জোগান বৃদ্ধি করা হয়। নাগরিকদের গণপরিবহন ব্যবহার করতে বলা হয়। ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমাতে পার্কিংয়ের ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়।
একিউআই ৪০০ ছাড়ালে গ্র্যাপ-৩ চালু করা হয়। সে সময় দিল্লি এবং এনসিআরে পাথর ভাঙা, যাবতীয় নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখা হয়। প্রাথমিক স্কুলের ক্লাস অনলাইনে চালু করা হয়। একিউআই ৪৫০ ছাড়ালে গ্র্যাপ-৪ চালু করা হয়।
গ্র্যাপ ৪-এর অধীনে প্রয়োজনীয় জিনিস ছাড়া কোনো ভারী গাড়ি দিল্লিতে প্রবেশ করতে পারবে না অথবা এলএনজি, সিএনজি, বিএস VI ডিজেল এবং ইলেক্ট্রিক যানবহনে ছাড় থাকবে। দিল্লির বাইরের রেজিস্ট্রেশন করা কর্মাশিয়াল গাড়ি প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি অফিসগুলিতে ৫০ শতাংশ কর্মীর উপস্থিতি এবং ৫০ শতাংশ কর্মী 'ওয়ার্ক ফ্রম হোম'-র ভিত্তিতে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, দূষণের কারণে দশম ও দ্বাদশ শ্রেণি ছাড়া বাকি সমস্ত শ্রেণির ক্লাস অনলাইনে করার নির্দেশ জারি করেছিল দিল্লি সরকার। সোমবার এই নির্দেশ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের ভর্ৎসনার মুখে পরে দিল্লির আপ সরকার। বিচারপতিদের প্রশ্ন, দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের ফুসফুস কি আলাদা? দিল্লি এবং এনসিআর-এর একাধিক স্কুল বন্ধ রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন